বিপৎসীমার ওপরে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি
লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চর ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যন্য নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে হুহু করে। বৃষ্টিপাত আর উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে থেকে আসা পানির চাপের কারণে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবগুলো।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের বুকে ৮০টি চর ও নদী তীরবর্তী ৪০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় আমন ধান খেত ও রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার ইউনিয়নে ৫ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে পানিবন্দি পরিবারগুলোকে বৃহস্পতিবার রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। তার ইউনিয়নটি তিস্তা ব্যারেজের পাশে হওয়ায় তিস্তায় পানি বাড়লে তার ইউনিয়ন প্রথম প্লাবিত হয়।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার ইউনিয়নে ৭ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে পানিবন্দি লোকজনকে নিরাপদে আনা হচ্ছে। তারা খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পানিবন্দি লোকজনকে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনে আবেদন জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুধকুমারের পানিতে গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। চরের পানিবন্দি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে। দুধকুমার পাড়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে।'
লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর হরিণচড়া এলাকার কৃষক মেসের আলী (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা নদীর পানিতে তাদের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘরের ভেতর পানি ঢুকেছে। রান্নার চুলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নলকূপগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তারা কোনরকমে খাটের ওপর বসে সময় কাটাচ্ছেন। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় তারা নৌকায় চড়ে যাতায়াত করছেন।'
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর গ্রামের কৃষক নগেন চন্দ্র বর্মণ (৬২) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘরের ভেতর নদীর পানি ঢুকেছে। তারা বাড়িঘর ছেড়ে আসবাবপত্র ও গবাদি পশু নিয়ে সরকারি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। তিস্তার পানি এখনো বাড়ছে।'
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা ও ধরলাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানি আরও বাড়ছে। এখন পযর্ন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি।'
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুধকুমার পাড়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যন্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দুধকুমার পাড়ের ৪টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।'
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ সাংবাদিকদের জানান, পানিবন্দি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এসব শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে পানিবন্দি মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি লোকজনের সঙ্গে দেখা করছেন।
Comments