হাসিনার পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা ভারতের: ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনার পাশে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো এক কূটনৈতিক বার্তায় অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত।
ভারতের নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবিটি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এ তোলা। ছবি: এএফপি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একাধিক মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সহমত নয় ভারত। জি২০ বৈঠকের আগে এক কূটনৈতিক বার্তায় বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে দিল্লি। ভারতের বক্তব্যে কয়েকটি ভাগ আছে।

কূটনৈতিক নোটে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারো পক্ষেই সুখকর হবে না। কারণ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে জামায়াতের মতো সংগঠনের ক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতকে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দেখে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তুলনা করে। কিন্তু ভারত মনে করে জামায়াত একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। ভারতের বার্তায় একথা স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ স্থলসীমান্ত আছে। বাংলাদেশে জামায়াতের মতো সংগঠন শক্তিশালী হলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যার মুখে পড়বে। জামায়াতের মতো সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় যোগ আছে বলেই মনে করে ভারত।

ভারত জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতও চায় বাংলাদেশে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে মন্তব্যগুলি করেছে তা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করে ভারত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল দিল্লি ঘুরে যাওয়ার পরেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতীয় প্রশাসনের।

আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে জি ২০-র বৈঠক শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেখানে আসবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং উপমহাদেশের ভূরাজনীতি নিয়ে সমান্তরাল বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ভারত জি ২০-র মঞ্চকে এ বিষয়ে আলোচনার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

আফগানিস্তানের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে, যেভাবে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ঘাঁটি সরিয়ে নিয়েছে, ভারত তাতে সন্তুষ্ট নয়। এর ফলে উপমহাদেশ অঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কা বেড়েছে। তালেবান উপমহাদেশের ভূরাজনীতিতে একটি বড় 'থ্রেট' হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে ভারত। বস্তুত, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভারতের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গেই বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক ভিসা নীতির সমালোচনা করেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন যারা বানচাল করার চেষ্টা করবে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সে দেশে ঢুকতে দেবে না। ভারত মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো। ভারত এই নীতিকে ভালো চোখে দেখছে না।

জি২০ বৈঠকে এই সবকটি বিষয়ই বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় উঠে আসতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বস্তুত, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসাররাও আড়ালে একথা স্বীকার করছেন।

ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, 'বাংলাদেশের জন্মের সময় থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মসৃণ থেকেছে। যখনই সে দেশে অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় এসেছে, দুই দেশের সম্পর্ক ততটা মসৃণ থাকেনি। তাই ভারত সবসময়ই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারকে গুরুত্ব দেয়।' উৎপল মনে করেন, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকার দেখতে চায় ভারত। কারণ, ভারত মনে করে আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকলে দুই দেশের সীমান্ত আপাতদৃষ্টিতে সুরক্ষিত থাকে।

Comments