আখাউড়া রেলস্টেশন

সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে নেই সমতল সিঁড়িপথ, দুর্ভোগ

নতুন স্টেশন ভবনে কোনো র‌্যাম্প না থাকায় তা দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও শিশুদের জন্য। ছবি: স্টার

নাসিমা ও সিদ্দিক—দুজনেরই এক পা নেই। তারা স্বামী-স্ত্রী। ভিক্ষাবৃত্তি তাদের পেশা। চলাফেরা করেন কাঠের তৈরি ক্র্যাচে ভর করে। প্রতিবন্ধী এই দম্পতিকে নবনির্মিত আখাউড়া রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পার হতে হয় অন্যদের সাহায্য নিয়ে।

নাসিমা-সিদ্দিকের মতো প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি অনেক বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু ও নারী এবং বেশি মালপত্র নিয়ে ভ্রমণ করা লোকজন আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে এসে এমন দুর্ভোগের শিকার হন।

সারা দেশে নতুন তৈরি রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সমতল সিঁড়িপথ অর্থাৎ র‌্যাম্প নির্মাণ করা হলেও পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম এই জংশন স্টেশনটিতে সেটি করা হয়নি। অথচ এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আখাউড়া-লাকসাম ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ ও এই জংশন স্টেশন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৭টি নতুন লাইন, তিনটি প্লাটফর্ম, ১৯০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট উচ্চতার সাধারণ ছয়টি সিঁড়ি করা হয়েছে। তবে নির্মাণ সম্পন্ন করা সাধারণ সিঁড়ি অনেক উচ্চতার ও বেশ দৈর্ঘ্যের হওয়ায় ভারী মালপত্র সঙ্গে থাকা যাত্রীর পাশাপাশি বয়স্ক ও শিশুদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

এ অবস্থায় নকশায় সমতল সিঁড়িপথ না রাখা এবং এটির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন একজন জনপ্রতিনিধি।

আবেদনে বলা হয়, ভ্রমণ ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যাতায়াতকারী অনেক যাত্রী প্রতিদিন এই স্টেশন ব্যবহার করেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য সমতল সিঁড়িপথ না রেখে নকশা তৈরি করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আইনের লঙ্ঘন করেছেন।

প্ল্যাটফর্মে উঠতে ঝুঁকি নিয়েই লাইন পার হচ্ছে প্রতিবন্ধী নাসিমা-সিদ্দিক দম্পতি। ছবি: স্টার

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এর ৩৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, 'যে কোনো স্টেশন, বন্দর, পার্ক, টার্মিনাল ও সড়ক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আরোহণ, চলাচল ও ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।'

একই আইনের ৪০ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে, 'এই আইনের লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি যদি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হয়, তাহলে প্রত্যেক কর্মকর্তা বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে গণ্য হবেন।'

রেলওয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালে কাজ শুরু হয়ে ইতোমধ্যে আখাউড়া জংশন স্টেশন ভবনের আধুনিকায়ন, নতুন একাধিক প্ল্যাটফর্ম ও রেলট্র্যাক নির্মাণসহ আধুনিক সিগন্যাল সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। চলমান কাজের সুবিধার্থে পুরনো প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখায় নতুন প্ল্যাটফর্মে যাত্রাবিরতি দিচ্ছে ট্রেন। ফলে বিশাল সিঁড়ি বেয়ে ট্রেনে উঠতে বাধ্য হচ্ছে অধিকাংশ যাত্রী।

গত বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৫০ ফুট লম্বা সিঁড়ি বেয়ে ফুটওভারব্রিজ পার হচ্ছে অল্প কয়েকজন যাত্রী। নবনির্মিত ফুটওভারব্রিজটিতে ওঠা-নামার জন্য উভয় পাশে রয়েছে তিনটি করে ছয়টি সিঁড়ি। কিন্তু এতে কোন র‌্যাম্প রাখা হয়নি। এজন্য অধিকাংশ যাত্রীকে রেললাইনের স্লিপারের উপর দিয়ে এক প্লাটফর্ম থেকে অন্য প্লাটফর্মে যেতে দেখা গেছে।

প্ল্যাটফর্মে অবস্থান নেওয়া স্থানীয় কয়েকজন যাত্রী জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী প্রায় প্রতিটি আন্তঃনগরসহ সব ট্রেন যাত্রাবিরতি দেয় এই জংশন স্টেশনটিতে। সবগুলো ট্রেন মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী এই স্টেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন গন্তব্যে যান।

রেললাইনের স্লিপারের উপর দিয়ে হেঁটে পার হওয়া নাসিমা ও সিদ্দিক দম্পতির সঙ্গে কথা বলেন দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদক। তারা ডেইলি স্টারকে জানান, অন্তত একটা সমতল সিঁড়ি যদি থাকতো, তাহলে তাদের মতো প্রতিবন্ধীদের খুব সুবিধা হতো। এখন তিন তলার সমান উঁচু করে যে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে তা দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াত একেবারে অসম্ভব।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা আখাউড়া পৌরসভার কাউন্সিলর ইনামুল আহসান খাদেম বলেন, 'দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তর একটি জংশন স্টেশনের নকশায় র‌্যাম্প সিঁড়ি না রাখাটা দুঃখজনক। এখন সাধারণ সিঁড়ি করে ফেলায় সমতল সিঁড়ি তৈরির জায়গাও নেই। তবুও এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনমন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।'

এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক সুবক্ত গীন বলেন, 'এই প্রকল্পের নকশায় র‌্যাম্প নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। এখন সকলের দাবির প্রেক্ষিতে এটা করা যায় কিনা, তা নিয়ে পরামর্শকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English

How Chattogram built its economic legacy

Picture a crowded harbour where the salty seabreeze carries whispers of far-off lands, where merchants of all creed and caste haggle over silks and spices, and where towering ships of all varieties – Chinese junks, Arab dhows, and Portuguese carracks – sway gently in the waters of the Bay of Bengal.

13h ago