মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত পাহাড়ের শিশুরা

ফাইল ছবি

দেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য রয়েছে তাদের মাতৃভাষায় লেখা বই। কিন্তু, এসব ভাষায় দক্ষ শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ।

শুধু তাই নয়, চলতি বছরের প্রায় ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পাহাড়ে পৌঁছায়নি তাদের মাতৃভাষায় লেখা বই।

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার আমতলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে শতাধিক। তাদের মধ্যে একজন মারমা ও একজন চাকমাসহ মোট ৬৭ শিশু বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর।

গুদামে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় লেখা বই। ছবি: সংগৃহীত

স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভাষার বই এসেছিল। কিন্তু এ বছর এখনো আসেনি। এ ছাড়া, চাকমা-মারমাসহ অন্যান্য ভাষায় দক্ষ শিক্ষক না থাকায় এসব ভাষার বই পড়ানো যাচ্ছে না শিশুদের।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেশমনি তনচঙ্গ্যা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের স্কুলে ত্রিপুরা, ম্রো ও তনচঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী সংখ্যায় বেশি থাকা সত্ত্বেও তনচঙ্গ্যা ভাষায় এখনো বই প্রকাশিত হয়নি। তাই চাইলেও পড়াতে পারছি না।'

একই উপজেলার দয়াল চন্দ্র পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় দেড় শতাধিক, তাদের মধ্যে মারমা ৩০ জনের বেশি।

এই স্কুলের মোট পাঁচ জন শিক্ষকের মধ্যে একজনও মারমা শিক্ষক নেই।

কথা হয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কোহিনুর আক্তার, রইলে ম্রো ও বিপ্লব কান্তি দাশের সঙ্গে।

তারা ডেইলি স্টারকে জানান, এ স্কুলে মারমা ভাষায় শিক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। মারমা ভাষায় পড়ানোর জন্য কোনো প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি শিক্ষকদের। তাই চাইলেও তারা মারমা ভাষায় পড়াতে পারছেন না।

বিপ্লব কান্তি দাশ বলেন, 'বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাতৃভাষার বইগুলোতে মাতৃভাষার হরফের পাশাপাশি সেগুলোর বাংলা উচ্চারণ যদি লিখিত রূপে থাকে তাহলে আমরাও পড়াতে পারতাম এবং নিজেরাও শিখতে পারতাম। যেমন করে আমরা ইংরেজি, সংস্কৃত ও আরবি ভাষা শিখি।'

চম্পক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াহুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের স্কুলে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীসহ মোট ৩০২ জন শিক্ষার্থী আছে। তবে, এ বছর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের মাতৃভাষার বই এখনো আসেনি। তাই বিতরণও করা হয়নি।'

আলীকদম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট ৭৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। সরকারের নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ে বই বিতরণ করা হয়েছে।

তবে, গুদামে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার বইগুলো পড়ে আছে।

স্কুলে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর বই বিতরণ না করার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোশারফ হোসেন খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি গত ২৮ ডিসেম্বর এ উপজেলায় যোগদান করেছি। সে হিসেবে আমি এখনো নতুন। যদি বই বিতরণ করা না হয়ে থাকে, তাহলে অতি শিগগির বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Tariffs, weak confidence heighten risks for Islamic banks

The global ratings agency said weak solvency of the banks, compounded by poor governance, is eroding depositor confidence, and this, in turn, will limit their growth.

9h ago