সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল হলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে: টিআইবি

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ সংশোধন করে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা সরিয়ে নেওয়া হলে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি একথা জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই উদ্যোগ নেওয়া হলে দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীকে জবাবদিহি থেকে দায়মুক্তির পাশাপাশি দুর্নীতি সুরক্ষিত ও উৎসাহিত হবে।

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রহিত করে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের খসড়া সংশোধনী যাচাইয়ের পর এটি এখন প্রশাসনিক উন্নয়নবিষয়ক কমিটিতে পাঠানো হবে।

সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধি বাতিলের ফলে অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের আরও বেশি করে দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সরকারি চাকরিজীবী (আচরণ) বিধিমালার প্রস্তাবিত সংশোধনী সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ও শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণার ঠিক উল্টো। প্রথমে প্রতি বছর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও সরকারি কর্মচারীদের অনীহার মুখে পরবর্তীতে শিথিল করে তা পাঁচ বছর পর পর দেওয়ার বিধান করা হয়। এবং সেই বিধানও সঠিকভাবে পালনে অনাগ্রহ ছিল। চাকরির শুরুতে সম্পদের বিবরণী দিলেও, পাঁচ বছর পর পর হিসাব হালনাগাদের বাধ্যবাধকতা গুরুত্বই দেন না সরকারি কর্মচারীরা। এখন এই বাধ্যবাধকতা সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো প্রকারান্তরে সরকারি কর্মচারিদের দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠতে ব্যাপক উৎসাহ দেওয়া। কেননা, সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার মতো কোনো বিধান না থাকলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নির্ভয়ে দুর্নীতি, এর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুযোগ বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। একই সঙ্গে প্রাপ্য সেবা পেতে সরকারি অফিসে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে, অবৈধ অর্থ লেনদেন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বোপরি সুশাসিত সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিতের স্বপ্ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।'

টিআইবি জানায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব সরাসরি নিয়মিত জমা ও হালনাগাদের পরিবর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে দেওয়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন থেকে নেওয়ার যে যুক্তি, বাস্তবে তা অর্থহীন। কারণ, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। আইনের ৩০৯(২) এবং ৩০৯(৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো সরকারী কর্মচারীকে এই আইনের অধীনে কোনো ট্যাক্স রিটার্ন, অ্যাকাউন্ট বা নথি উপস্থাপন, সাক্ষ্য বা প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপনের আদেশ দিতে পারে না। অর্থাৎ দুদক দুর্নীতি বা বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ আহরণের অভিযোগে কোনো ব্যক্তির আয়কর বিবরণী আদালতের নির্দেশ ছাড়া দেখতে পারবে না। ফলে জবাবদিহির মুখোমুখি হওয়ার বদলে এই সংশোধনীর মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীরা নতুন সুরক্ষা লাভ করবেন।

২০০৩ সালে গৃহীত জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে জনপ্রতিনিধিসহ সব সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রতি বছর দাখিল ও তার বছরভিত্তিক পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, ২০১২ এর মাধ্যমে এ অঙ্গীকারের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এ অবস্থায় এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আরোও এক দফা প্রশ্নের মুখে পড়বে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'বাংলাদেশ আনকাক-এর সদস্য দেশ, অথচ সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধিতে এমন সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া বৈশ্বিক আদর্শিক চর্চা ও আনকাক-এর দুর্নীতিবিরোধী মূল নীতির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। একইভাবে, "জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, ২০১২" যা প্রণয়নে সরকারি কর্মকর্তারাই মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তাকেও পদদলিত করা হবে। অসাধু কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সুরক্ষা ও বিচারহীনতা প্রদানের স্বার্থে এ আত্মঘাতী উদ্যোগ থেকে সরে আসার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাই।'

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

15h ago