এবার দেশাত্মবোধক গানে নাচলো ‘মানব-পুতুল’

সত্যিকারের পুতুলনাচ যখন বিলুপ্তির পথে, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি স্কুলের একঝাঁক শিশু শিক্ষার্থী 'মানব-পুতুল' সেজে নাচ পরিবেশন করে বেশ তাক লাগিয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ঝড় তোলার ঠিক এক মাস পর এবার সেই শিশুরা দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করেছে।

আজ মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক ডিসপ্লেতে অংশ নেয় তারা। এসময় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা 'মানব-পুতুল' সেজে 'দে তালি বাঙালি আজ নতুন করে স্বপ্ন দেখালি' গানের সঙ্গে নাচ প্রদর্শন করে।

এর আগে, সকাল পৌনে ১০টায় বধূ সাজে স্টেডিয়ামে নামে একদল মানব-পুতুল। সংখ্যায় তারা ৪৯ জন। জানা যায়, স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে পুতুল সেজে নাচবে তারা। তাদের নাচ দেখতে আগে থেকেই হাজারো দর্শকের উপস্থিতি ছিল। ডিসপ্লে চলাকালে দর্শকদের মধ্যেও ছিল বেশ উচ্ছ্বাস। মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে মানব-পুতুলদের স্বাগত জানান তারা। পুতুল নাচের ব্যতিক্রমী এই ডিসপ্লে জেলাজুড়ে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। পরে অবশ্য তারা ক্রেস্ট জিতে নেয়।

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সূর্যমুখী কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মানব-পুতুল সেজে 'এই যে দুনিয়া, কিসের লাগিয়া' গানের সঙ্গে এইসব শিশু শিক্ষার্থীর নাচের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। দেশজুড়ে তুমুল আলোচনার জন্ম দেওয়া এই নাচের নেপথ্য কারিগর হলেন ওই স্কুলের শিক্ষক ও নৃত্য প্রশিক্ষক মো. আল সাইফুল আমিন জিয়া।

জিয়ার ভাষ্য, পুতুলনাচের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুনাম বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ধন মিয়া। এই ধন মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্ব মেড্ডা এলাকায়। নৃত্য প্রশিক্ষক জিয়ার বাড়িও একই এলাকায় হওয়ায় এবং ধন মিয়া তার বাবার বন্ধু ছিলেন বলে ছোট বেলায় তার প্রদর্শিত সত্যিকারের পুতুলনাচ দেখার সুযোগ হয়েছিল জিয়ার। ধন মিয়া কর্তৃক প্রদর্শিত সেই পুতুল নাচই মূলত তাকে আজকের মানব-পুতুলের কোরিওগ্রাফি করতে অনুপ্রাণিত করেছে। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই নিজের কর্মস্থল সূর্যমুখী কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুলের একদল শিশু শিক্ষার্থীকে তালিম দিয়ে পারদর্শী করে তুলেন তিনি। সুতা দিয়ে সত্যিকারের পুতুলকে মঞ্চে যেভাবে নাচানো হতো, এর আদলেই মানব-পুতুল শিশুদের হাতে সুতা বেঁধে নাচ প্রদর্শন করান তিনি। 

বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতি পুতুলনাচকে নবরূপ দিয়ে জনপ্রিয় করে তোলার পথিকৃতের খাতায় নাম লিখিয়েছেন জিয়া। এখন দেশজুড়েই তার সুনাম। এক মাসের মধ্যেই জাতীয় শিল্পকলা, শিশু একাডেমি থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের অনেক প্রতিষ্ঠানের ডাক পেয়ে পুতুলনাচে অংশগ্রহণের পাশাপাশি অনেক পুরস্কার জিতেছেন তিনি ও তার দল। 

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

আজ মঙ্গলবার নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়াম থেকেই তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নাচে অংশ নিয়েছিল ২৫ জন। এবার তারা বড় পরিসরে ৪৯ জনকে নিয়ে আয়োজনটা করেছেন। তবে সময়ের অভাবে মাত্র তিনদিন অনুশীলন করতে পেরেছেন।

নাচে নেতৃত্ব দেওয়া পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফসুনের ভাষ্য, 'ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ আমি কখনো দেখিনি। জিয়া স্যার আমাদের তৈরি করেছেন। সারাদেশে ফেমাস হয়ে যাওয়া এই নাচে অংশ নিতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে।'

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিভাবকরা জানান, আমাদের সন্তানেরা এ আয়োজনের গর্বিত অংশীদার হতে পেরেছে। এতে আমাদের খুব ভালো লাগছে। এ নাচের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, 'মন্ত্রমুগ্ধের মতো শিশুদের পরিবেশিত নাচ উপভোগ করেছি। শিশুরা পুতুলনাচের ডিসপ্লে বেশ চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছে। পুতুলনাচ যেহেতু আমাদের ঐতিহ্য, এজন্য আমরা চাই শিশুরা এই ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকুক। এ ধরনের আয়োজনকে সমৃদ্ধ করতে জেলা প্রশাসন সবসময় সহযোগিতা করবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Khamenei advisers killed by Israeli airstrike

Iran vows retaliation after US strikes on nuclear sites

"The Zionist enemy... is being punished right now," Khamenei wrote on social media.

9m ago