উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী আ. লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ
চট্টগ্রামে আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ করছেন।
তাদের আশঙ্কা, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হলে সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই।
এর একটি কারণ, বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এবং দলটির স্থানীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়া।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামীকাল চট্টগ্রামে তিন উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে মূলত আওয়ামী লীগ নেতারাই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।
এর মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য মহীউদ্দীন আহমেদ মঞ্জু। তিনি দোয়াত-কলম প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি আরিফুল আলম চৌধুরী।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মঞ্জু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার এজেন্টদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'তাদের হুমকির কারণে ২ নম্বর বাড়ইয়াঢালা ইউনিয়নে আমার এজেন্টরা কেউ আগামীকাল ভোটকেন্দ্রে যেতে সাহস পাচ্ছে না। আমি কাউকে সেখানে পাঠাতে পারব কিনা জানি না।'
'এ অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন নিয়ে সামগ্রিকভাবে একটা আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে,' বলেন তিনি।
'স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রচ্ছন্ন প্রভাবে তারা হুমকি দিচ্ছে' অভিযোগ করে মঞ্জু বলেন, 'এ বিষয়ে আমি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু যারা হুমকি দিচ্ছে, তারা এসব অভিযোগের কেয়ার করে না।'
'স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম আল মামুন সীতাকুণ্ডের সব উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে ডেকে সম্প্রতি নগরীর একটি ক্লাবে বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকে তিনি সবাইকে আরিফুলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন,' বলেন মঞ্জু।
জানা যায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় আরিফুলকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার হয়নি বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বর্তমান সংসদ সদস্য এসএম আল মামুনের অনুসারী ছিলেন আরিফুল।
কিন্তু সে সময় দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তখনকার সংসদ সদস্যের অনুসারীরা।
এই বিষয়ে জানতে আরিফুলকে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের সংসদ সদস্য এসএম আল মামুনকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও, তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে, মিরসরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেখ আতাউর রহমান ও এনায়েত হোসেন নয়নের মধ্যে হবে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
আতাউর হচ্ছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আর এনায়েত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ তুলে আতাউর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার প্রতিপক্ষ নয়ন নির্বাচনে যেকোনো উপায়ে জয়লাভ করতে বেপরোয়া হয়ে গেছে। গত ১০-১৫ দিন ধরে তিনি আমাকে প্রচ্ছন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য।'
'স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহবুব-উর-রহমান রুহেলের প্রশ্রয়ে তিনি বেপরোয়া আচরণ করছেন। আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে,' বলেন তিনি।
আতাউর আরও বলেন, 'কেন্দ্র দখলের যে সংস্কৃতি দেশে চালু আছে, তা এবারের নির্বাচনে তারা ব্যবহার করতে চায়। আমি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন দেখা যাক, আগামীকাল ভোটের দিন কী হয়।'
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নয়ন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আতাউর রহমান দলের সিনিয়র নেতা। তিনি কেন আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করছেন জানি না।'
'আমার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ নেই। আমরা সবাই এক দল করি। আমি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের কোনো চেষ্টা করছি না, সেটা সম্ভবও নয়,' বলেন তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থনের অভিযোগের বিষয়ে নয়ন বলেন, 'স্থানীয় সংসদ সদস্য কি কোথাও বক্তৃতা বা বিবৃতি দিয়ে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন? এরকম কোনো প্রমাণ কি আছে? এসব মনগড়া অভিযোগ।'
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উর-রহমান রুহেলকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও, তিনি রিসিভ করেননি।
এই দুই উপজেলার বাইরে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনও আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থী থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
Comments