সর্বোচ্চ এডিপি বরাদ্দ পাবে রূপপুর ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে চলেছে সরকার। মেট্রোরেল প্রকল্পেও বরাদ্দ বাড়ছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রূপপুর ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মেট্রোরেল প্রকল্পগুলো পেতে পারে ৩৪ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা এডিপির ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কিত ছয়টি প্রকল্প সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাবে। প্রকল্পগুলোতে দেওয়া হবে ১২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।
১ লাখ ১৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এতে ব্যয় হয়েছে ৬৮ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই প্রকল্প পেয়েছে ৯ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাবে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা।
সরকার আশা করছে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে কিংবা তার আগেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ছয়টি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তথ্য মতে, এই ছয়টি লাইমের মধ্যে চারটির কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
লাইনগুলো হয়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট উৎপাদন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রকল্প পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, পদ্মার ওপারে লাইন স্থাপনের কাজ প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং অক্টোবরের মধ্যে সম্পূর্ণ শেষ হবে।
কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট পাঁচটি প্রকল্প পাবে ৮৮ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই প্রকল্প পাবে ১৪ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ১৬১ কোটি টাকা।
মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্ল্যান্টের একটি ইউনিট গত বছরের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং এটি কোনো সমস্যা ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। অপর ইউনিটটি জুলাইয়ের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশা করছি জুনের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংক্রান্ত কাজ শেষ হবে।'
তিনি বলেন, 'বিদ্যমান লাইনগুলো ৯০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম। কাজ শেষ হলে এই লাইন দিয়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা যাবে।'
প্রস্তাবিত এডিপি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় খরচ হবে ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৬৫৬ কোটি টাকা।
মাতারবাড়ী বন্দর সংক্রান্ত তিনটি প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তারা ৮ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা পাবে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।
১ লাখ ২৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার তিনটি মেট্রোরেল প্রকল্প আগামী অর্থবছরে ৬ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা পেতে যাচ্ছে।
এমআরটি লাইন ৬-এর উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া, বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন ১ এবং হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন ৫ এর কাজ শুরু হয়েছে। এই দুটি মেট্রোরেল লাইনের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আগামী অর্থবছরে মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
এমআরটি-১ নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৩ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা এবং এমআরটি-৫ নির্মাণে ব্যয় হবে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এডিপিতে এমআরটি-১ ও ৫ এর জন্য যথাক্রমে ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা এবং ৯৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
Comments