ব্যক্তিগত স্বার্থে আপনারা এত বড় একটা দলকে নষ্ট করবেন না: আ. লীগ নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

'পার্টিকে রিঅর্গানাইজ করেন, পলিটিক্যাল পার্টির মতো যেভাবে থাকে। ইলেকশন আসলে ইলেকশন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।’
ব্যক্তিগত স্বার্থে আওয়ামী লীগকে নষ্ট করবেন না
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, 'যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য শুধু কমিটি না আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের সাহায্য চাইতে হবে। এই ঘটনাটা কেন ঘটল বাংলাদেশে।'

তিনি বলেন, 'আমি এরইমধ্যে সুপারিশ করেছি। আবার যখন নেক্সট মিটিং হবে সেখানে আরও জোরালোভাবে বলব যে এটার জন্য কমিটি করা হোক। কীভাবে, কারা হুকুমদাতা ছিল, কেন হয়েছিল।'

আজ সোমবার সকালে ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত আনসার সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় আওয়ামী লীগকে দল পুনর্গঠনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা আপনাদের পার্টি রিঅর্গানাইজ করেন। এই পার্টির অনেক অবদান আছে বাংলাদেশে। এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না।'

তিনি বলেন, 'লোক জড়ো করেন আর যাই করেন এমন কিছু করবেন না যাতে আপনাদের জীবন বিপন্ন হয়। এদেশের পাবলিক এখনও আপনাদেরকে গ্রহণ করতে আসেনি। আমি বরং মনে করি আপনারা আপনাদের পার্টি রিঅর্গানাইজ করেন। এই পার্টির অনেক অবদান আছে বাংলাদেশে। এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। পার্টিকে রিঅর্গানাইজ করেন, পলিটিক্যাল পার্টির মতো যেভাবে থাকে। ইলেকশন আসলে ইলেকশন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।'

তিনি বলেন, 'এই স্বপ্নটা যদি আপনারা দেখেন তাহলে কী করবেন আপনারা এই দেশটা আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন না।'

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'এদেশের লোক এত তাড়াতাড়ি ভুলে নাই। সময় দেন হয়তো ভুলে যাবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ভোলে নাই। কারণ যাকে নেতা ধরছিলেন সেই নেতারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যাকে ধরছে তাকে আমরা বাঁচাতে পারছি না। অনেক নেতাকে অনেকে বাঁচিয়েছে। আমরা জানি কে কোথায় আছে। কিন্তু ওটা না করে আপনারা বরং পার্টিকে, এটা অনেক বড় পার্টি। অ্যান্ড আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। এক সময় আমাদের মতো বাঙালিদের তাদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বাংলাদেশে ৫২'র আন্দোলন, ৬৯'এর গণআন্দোলন, স্বাধীনতা—এটা পারসোনাল কোনো কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ।

তিনি বলেন, 'আপনারা আসুন যারা রেগুলার (রাজনীতি) করতে চান। এখানে মারামারি করে কোনো লাভ নেই। আরও কিছু লোকের মৃত্যু আমরা চাই না। অলরেডি ৪০০ থেকে ৫০০ হয়তো তারও বেশি মারা গেছে। উভয় পক্ষেই। পুলিশেরও একই অবস্থা হয়েছে, আনসারেরও এই অবস্থা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা যদি উস্কানি দিতাম তাহলে আপনারা টিকতে পারতেন না, আর্মি ফায়ারে। আমরা আর্মিকে মানা করেছি যে ডোন্ট ওপেন ফায়ার।  কারণ কাকে মারবেন আপনি? এই পুলিশকে দিয়ে কাকে মারিয়েছেন? পুলিশকে দিয়ে মারিয়েছেন আপনার সন্তানকে। একটা পুলিশের সদস্য কী বললেন, স্যার কয়টা গুলি লাগে একটা ছেলেকে ...তার ছেলের লাশ। এটা করবেন না। অনুরোধ করছি প্ররোচনায় আইসেন না। ব্যক্তিগত স্বার্থে আপনারা এত বড় একটা দলকে নষ্ট করবেন না। এটা আমাদের প্রাইড ছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। এটা নষ্ট করবেন না। এটা আপনার নষ্ট করার কোনো অধিকার নাই। এটা বাংলাদেশের সম্পত্তি।  

তিনি বলেন, 'আর এই যদি স্বপ্ন কেউ মনে করে যে এটা করে আবার কাউন্টার রেভ্যুলুশন করে আসবেন। কাউন্টার রেভ্যুলুশন করতে হলে আপনাকে আবার হাজার হাজার লোকের রক্ত বহাইতে হবে। যদি আপনারা সেই দায়িত্ব নিতে চান তাহলে নেন। আমার কিছু করার নেই।'

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে সরকার পতন নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে ইয়াং জেনারেশন তারা এটা করেছে। কোনো পলিটিক্যাল পার্টি করে নাই। দে হ্যাভ গিভেন দেয়ার লাইফ (তারা তাদের জীবন দিয়েছে)। যেটা আপনারা কোনোদিন দিতে পারতেন না। বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য। তার মুখে কোনো দুঃখ নাই। দে আর অল স্মাইলিং। এরা যতদিন আছে এরা কোথাও দৌড়াবে না। তারা আপনার মুখোমুখি দাঁড়াবে।'

'একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বলছি দয়া করে দেশটাকে স্বাধীন রাখেন।'

পুলিশের পোশাক, লোগো পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, সবাই তো পুলিশের দানব হয়ে যায়নি। তাদের মধ্যে রিয়েলাইজেশন আসছে তারা যা করেছে। তারা নিজেরাই বলেছে এই পোশাক পরে আমরা একদিনও বের হতে চাই না। তারপর আইজিপিসহ আমরা বললাম এটা তো এভাবে বললেই হবে না, এর জন্য সময় লাগবে। গতকাল আমি দেখলাম ট্রাফিক পুলিশ শুধু পুলিশের একটা জ্যাকেট পরে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। তাদের মধ্যে তো উপলব্ধি হয়েছে যে তারা কী করেছে। তারা কিছু করেনি, তাদের দিয়ে করানো হয়েছে।'

এসময় গতকালের মিডিয়া নিয়ে বক্তব্যের জন্য সাংবাদিকদের সামনে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'আমি কালকে একটা কথা বলেছি। সেজন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। রাগের মাথায় বলছি যে, আবার চাটুকারিতা করবেন বন্ধ করে দেব। এটা আমার কাজ না। এক্সেপ্ট যমুনা টেলিভিশন। সবার সামনে বলতেছি। যমুনা টেলিভিশন তাও কিছু দেখাচ্ছিল। তারপর দেখলাম বন্ধ হয়ে গেছে। এটা ভবিষ্যতে আমি আশা করি, আমরা থাকি না থাকি যারা পলিটিক্স করবেন তারা যদি এটা করেন তাহলে আপনারা যারা মিডিয়া আপনারা স্ট্রাইকে চলে যাবেন। কী আছে এক মাস না খেয়ে থাকবেন, মরে তো যাবেন না। আমি তাই ভাবছিলাম যমুনা টিভি দেখাচ্ছে বাকিরা দেখাবে। দেখালে অন্তত মানুষ দেখতে পারত যে কী ভয়ংকর দিক। আমরা ইউটিউবে দেখছি তখন।'

তিনি বলেন, 'আমি কালকে যে কথাটা বললাম, আমি কোনো মিডিয়াকে বন্ধ করার মোটেও পক্ষপাতি না। আমি সব মিডিয়াতে গেছি, প্রত্যেককে চিনি।'

Comments