চট্টগ্রামে শীতল ঝরনা খালে সেতু ধস: ৪ কারণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

চট্টগ্রামের অক্সিজেন-দুই নম্বর গেট সড়কের স্টারশিপ এলাকায় শীতল ঝরনা খালের ওপর ৫০ বছর আগে নির্মিত সড়কসেতুটির একাংশ ধসে পড়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রামের অক্সিজেন-দুই নম্বর গেট সড়কের স্টারশিপ এলাকায় শীতল ঝরনা খালের ওপর ৫০ বছর আগে নির্মিত সড়কসেতুটি ধসে পড়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। 

গতকাল বুধবার বিকেলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। 

প্রতিবেদনে ধসের জন্য চারটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি করণীয় সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি বলেছে, মূলত পুরনো ইটের ফাউন্ডেশনের সেতুটি খাল প্রশস্ত করার কারণে পানি প্রবাহের চাপ সহ্য করতে না পেরে ধসে পড়েছে। এটিই মূলত প্রধান কারণ।

এছাড়া সেতুর পাশের ড্রেনের পানি দীর্ঘদিন ধরে ফাউন্ডেশন এলাকায় ক্ষয় সৃষ্টি, শিল্পাঞ্চল হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভারী যানবাহনের চাপ এবং ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের কাজকেও সহায়ক কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত সেতুটি আধুনিক ভারবহন ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সেনাবাহিনীর প্রকল্পে শীতল ঝরনা খালের প্রশস্ততা ৬ মিটার থেকে ১৩ মিটারে উন্নীত করা হয় এবং গভীরতাও বাড়ানো হয়। ফলে বর্ষার সময় খালের পানির প্রবাহের গতি বৃদ্ধি পায় এবং ফাউন্ডেশনের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এতে সেতুর উত্তর পাশের ইটের আবাটমেন্ট ভেঙে পড়ে ও একাংশ বসে ধসে যায়। 

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সেতুর পাশে স্থাপিত ড্রেনের পানি দীর্ঘদিন ধরে ফাউন্ডেশনের পাশে ক্ষয় সৃষ্টি করেছে, শিল্পাঞ্চল হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভারী ট্রাক-লরি চলাচলে ইটের সেতুটি অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে, এবং ওয়াসার স্থাপিত ৯০০ ও ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার ব্যাসের পাইপলাইনের নির্মাণ কাজে পুরনো ফাউন্ডেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে—

১. খাল পুনঃখনন ও প্রশস্ত করার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ব্রিজ-কালভার্ট দ্রুত চিহ্নিত করে আধুনিক মানে পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

২. খালের গভীরতা বৃদ্ধির ফলে পুরনো রিটেইনিং ওয়াল ভেঙে পড়ছে, তাই এগুলো নতুন করে নির্মাণ জরুরি।

৩. নগরে যানবাহনের চাপ বহুগুণে বেড়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও কালভার্টে ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড বসাতে হবে।

৪. ওয়াসা, গ্যাস, বিটিসিএলসহ সেবা সংস্থাগুলোর পাইপলাইন বসানোর সময় যেন কোনো সেতু বা ড্রেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সমন্বয় বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি অনেক পুরনো কাঠামো, নতুন প্রকল্পের কারণে স্রোতের ধরণ বদলেছে। ফলে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য বাস্তবসম্মত সুপারিশ দিয়েছি।' 

তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা দ্রুত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেব। যেন ভবিষ্যতে এমন দুর্ভোগ আর না হয়।'

উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট রাতভর বৃষ্টির পর পানির প্রবল ঢলে শীতল ঝরনা খালের ওপর স্থাপিত সেতুটি ধসে পড়ে। এতে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

Comments

The Daily Star  | English

EC unveils roadmap for 13th national polls

Delimitation, voter list and party registration among 24 key tasks ahead of February 2026 vote

1h ago