‘নির্বাচিত নয় বলে সরকার মিয়ানমারের বোমার প্রতিবাদ করতে পারছে না’
সরকার জনগণের নির্বাচিত নয় বলে মিয়ানমারের বোমা নিক্ষেপের প্রতিবাদ করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার বিকেলে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'মিয়ানমার বোমা মেরে শেষ করে দিচ্ছে। তারা সীমান্তে বোমা মারছে, আমাদের এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তারা গুলি করছে। সরকার নীরব। নীরব কেন? আসলে এদের কোমর সোজা নেই। জনগণের নির্বাচিত নয় বলে তারা বুক ফুলিয়ে মিয়ানমারের বোমা নিক্ষেপের প্রতিবাদ করতে পারছে না, বিশ্ব জনমতকে এক জায়গায় আনতে পারছে না।'
তিনি আরও বলেন, 'এই যে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা আমাদের সাধারণ মানু্ষের চাল-ডাল-তেলের দাম কমানোর জন্য। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য, ভোটের অধিকারকে রক্ষার জন্য। এখন এই আওয়ামী লীগ সরকার পেটোয়া বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। ওরা হত্যা করেছে ভোলা ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা এবং নারায়গঞ্জের যুবদলের নেতাকে। গতকাল আপনারা দেখেছেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা বেগমকে আহত করেছে, আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুকে আঘাত করেছে, আমাদের নারী নেত্রীদেরও তারা রেহাই দেয়নি। তাদেরও তারা আঘাত করেছে।'
'আজকে এই সরকার একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে, তখন তারা সন্ত্রাস, হত্যা, সভা পণ্ড করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। যাতে করে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে সোজা হয়, সহজ হয়', যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'আজকে বিভিন্ন জায়গায় আপনারা (ক্ষমতাসীনরা) সন্ত্রাস করছেন এবং সভা-সমাবেশ করতে অনুমতি দিচ্ছেন না। আমি বলতে চাই, এসব করবেন না। এভাবে বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না, নিপীড়ন-দমন করে বাংলাদেশের মানুষকে কখনো দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদেরকে পরাজিত করা হবে।'
রাজধানীতে চলমান কর্মসূচির সময় দলের গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, 'এখনও সময় আছে। পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সংসদ বিলুপ্ত করুন। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন পার্লামেন্ট ও সরকার তৈরি করতে হবে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'ওরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এই কথা বললে তাদের গায়ে আগুন লাগে, তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। বলে, আমরা তো এই সমস্তের মধ্যে নাই। কিছু দিন আগে গুমের কথা বলা হলো, তারা বলল গুম হয় না। নিজেরা নিজেরা নাকি গুম হয়ে যায় অথবা ভূমধ্যসাগরে পানির নিচে গিয়ে ডুবে মরে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ঢাকায় এসে বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, গুম হচ্ছে, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, 'মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের নীরব কর্মসূচিও সরকারের সহ্য হলো না। তাহলে কী দাঁড়াল? এদেশের মানুষ কথা বলতে পারবে না। আপনারা নিপীড়ন-নির্যাতন করে যাবেন, আর আমরা সহ্য করতে থাকব। আমি বলতে চাই, এটা আর হবে না, যথেষ্ট হয়েছে। সারাদেশের জনগণ আজকে ফুঁসে উঠেছে, সারা বাংলাদেশের জনগণ আজ রাজপথে নেমে এসেছে।'
সভা-সমাবেশে সরকার বাধা দিচ্ছে এবং অনুমতি দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার পল্লবীসহ সারাদেশে দলের কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মশিউর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আজিজুল বারী হেলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ মহানগরের নেতারা বক্তব্য দেন।
পরে নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এভারকেয়ার হাসপাতালে দলের আহত ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও তার সহধর্মিনীকে দেখতে যান। তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
Comments