এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন: সরকারকে মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের পরিষ্কার কথা এখনো সময় আছে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগণের পার্লামেন্টে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।
শনিবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের পরিষ্কার কথা এখনো সময় আছে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগণের পার্লামেন্টে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।

আজ শনিবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আজকে সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, যুব দল, ছাত্র দল, স্বেচ্ছাসেবক দল সবাই জেগে উঠেছে। আমি আহ্বান জানাতে চাই- এ দেশকে রক্ষা করবার জন্য- বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি না, ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি- বাংলাদেশের জনগণকে। কারণ এদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ।'

'আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং সমগ্র মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করি, রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করি- করে একটি দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করি। যেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করি, পরাজিত করে তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করি,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'তবেই এই সরকারকে সরিয়ে আমার সন্তান শহীদুল ইসলাম শাওন, আব্দুর রহিম, নুরে আলম আর শাওন প্রধানের রক্তের প্রতিশোধ নিতে পারব। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বুকের শক্তি নিয়ে বজ্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করে সামনের দিকে এগিয়ে চলি- সেটাই হবে আমাদের একমাত্র পথ।'

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'কথায় কথায় গুলি করবেন, কথায় কথায় জেল দেবেন, কথায় কথায় আগুন জ্বালিয়ে দেবেন এদেশের মানুষ তা আর সহ্য করবেন না। এক শাওনের মৃত্যুতে, আরেক শাওনের মৃত্যুতে, রহিমের বা নুরে আলমের মৃত্যুতে মানুষের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে সেই অভ্যুত্থানকে বন্ধ করা বা দমন করা সম্ভব হবে না।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'শাওনের বাবা বলেছেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে হত্যা করেছে। পিতার কাঁদে সন্তানের লাশ। এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।'

'আজ সকালে যখন পত্রিকা দেখছিলাম, সেই পত্রিকায় শাওনের ৭ মাসের ফুটফুটে বাচ্চা, তার পিতা ও স্ত্রীর ছবি দেখার পরে আমাদের আর এই জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এখন আমাদের রাজপথে নেমে পুরোপুরিভাবে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য যে দায়ী তাকে সরাতে হবে। শাওন নয়, এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে পর পর ৪ জন সন্তানের রক্ত নিয়েছে শেখ হাসিনা,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, গুম করে, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়ে, মিল-কারখানা পুড়িয়ে দিয়ে আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। মুন্সিগঞ্জে শুধুমাত্র শাওনকে হত্যা করে তারা ক্ষান্ত হয়নি। এরপরে তারা বিএনপির নেতার কারখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে, বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং গোটা মুন্সিগঞ্জে তারা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এভাবেই তারা সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। যারা গত ১৫ বছরে আমাদের ৬০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। তারা জাতিসংঘে গিয়ে বলে যে- যুদ্ধ চাই না, তারা বলে যে- নিষেধাজ্ঞা চাই না। কোনো মুখে এ কথা বলেন? কারণ যে দেশে আপনি বাস করেন, যে দেশে আপনি প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই দেশের মানুষকে আপনি হত্যা করছেন।'

'তাদের একটা মাত্র অপরাধ তারা গণতন্ত্র চায়, তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়, ভোটাধিকার ফিরে চায়, বেঁচে থাকতে চায়, একজন মানুষের মতো জীবনযাপন করতে চায়। রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে আপনারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন,' যোগ করেন তিনি।

Comments