বাউফলের ১৫ ইউনিয়নের বিএনপির কমিটি ঘোষণা, পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ

বিএনপি

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদ পাননি, এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

ঢাকায় বসে ত্যাগী নেতাকর্মীদের পদ না দিয়ে স্বজনপ্রীতি করে কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. তসলিম তালুকদার ও মো. অনিচুর রহমান।

দলীয় সূত্র জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পর আগামীকাল শনিবারের পূর্ব ঘোষিত উপজেলা বিএনপির সম্মেলন বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণার বিষয়টি তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তসলিম তালুকদারের অভিযোগ, 'দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করেছেন এমন ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতি করে অদক্ষ, অসাংগঠনিক এবং এলাকায় থাকেন না এমন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেনের নির্দেশে ঢাকায় বসে এসব কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।'

আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. অনিচুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বার ও সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ওরফে আপেল ফিরোজ দুজনই বিতর্কিত। আবদুল জব্বার ঢাকায় থাকেন। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ আছে। আর আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে অদক্ষদের নেতা বানানোর আশ্বাস দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে।'

'কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেনের আজ্ঞাবহ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি,' বলেন তিনি।

নওমালা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা ছিলাম। সব আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েও ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক পদ পাইনি। পদ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের অর্থ জোগানদাতাকে। প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে সক্রিয় জামায়াতের এক সদস্যকে।'

উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক ও নাজিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ত্যাগী নেতাকর্মীদের নাম পাঠিয়েছিলাম। তাদের কারও নামই কমিটিতে রাখা হয়নি।'

'কালিশুরী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রায়হান জব্বার থাকেন ঢাকায়। নজরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাকে করা হয়েছে ধূলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বারের আপন ছোট ভাই। অধিকাংশ ইউনিয়নে স্থানীয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না এমন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে,' বলেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়েই ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণা করেছেন। এখানে আমার কোনো হাত নেই।'

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বারকে গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার দুই দিন বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। 

সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলে যারা জায়গা পাননি, তারাই অভিযোগ করছেন। কেন্দ্রে কমিটি জমা দেওয়ার পর ফেসবুকে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকায় বসে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।'

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অনেকে ঢাকায় ব্যবসা করলেও এলাকায় আসেন। এর আগেও তারা কমিটিতে ছিলেন।'

জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাকে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণে বাউফল উপজেলা বিএনপির আগামীকালের সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আগামী সোমবার সকালে পটুয়াখালী জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।'

স্থানীয় বিএনপি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর বাউফল উপজেলা ও বাউফল পৌরসভা শাখা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠির মাধ্যমে তা স্থগিত করা হয়। 

পরে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আগের কমিটি বহাল রেখেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু টাকার বিনিময়ে বিএনপির কমিটি ঘোষণার একটি অডিও ফাঁসের ঘটনায় চলতি বছরের ২৭ জুন নৈতিক স্খলন ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাউফল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. শাহজাদা মিয়া ও সদস্য সচিব মো. অলিয়ার রহমানকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

নতুন করে আবদুল জব্বারকে আহ্বায়ক ও আপেল মাহমুদকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা দুজন ওই কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

10h ago