‘দুর্নীতি দমন কমিশন বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে’

দুর্নীতি দমন কমিশন এখন বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

দুর্নীতি দমন কমিশন এখন বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

আজ শনিবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মোশাররফ বলেন, 'আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমাদের ১০ দফা আন্দোলন এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত কর্মসূচি দেওয়ার পরে সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকমের পুলিশি ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্দোলনকে দমন করতে চাচ্ছে। গত ৭ ডিসেম্বর আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে এবং আমাদের ৪০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। পরদিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সারা দেশে বিশেষ অভিযানের নামে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।'

তিনি বলেন, 'এই সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে এবং আজকে যে বিদায়ের দাবি উঠেছে তাতে সরকার ভীত। ভয়ের কারণে তারা এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারই অংশ হচ্ছে তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা চালু করা ও সম্পত্তি জব্দের আদেশ। আমাদের চলমান আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য সরকার এসব কর্মকাণ্ড করছে। গত ১৪ বছর ধরে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নির্যাতন হচ্ছে, গুম হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যা হয়েছে।'

আমাদের কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ থেকে বোঝা যায়, এসব নির্যাতন করে আমাদের দমন করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন মোশাররফ। 

এর আগে লিখিত বক্তব্যে মোশাররফ বলেন, 'বর্তমান ব্যর্থ, দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির শিকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।'

তিনি বলেন, 'গত ৫ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই আদেশ ফরমায়েশি এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ।'

'এক-এগারোর জরুরি অবস্থার অনৈতিক সরকার দেশকে বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্যে মাইনাস-টু ফর্মুলাসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদের মিশন সফল করতে চেয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তারেক রহমানের স্ত্রী ও জিয়া পরিবারের সদস্য হওয়ায় ডা. জোবাইদা রহমানকেও একই মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়। জনগণের কাছে স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র, উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারক ও বাহক জিয়া পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন ও বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এবং অপরাপর রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়,' বলেন তিনি।

মোশাররফ আরও বলেন, 'এক-এগারোর জরুরি অবস্থার ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের মামলাগুলো বিভিন্ন উপায়ে স্থগিত বা প্রত্যাহার করলেও বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, ডা. জোবাইদা রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এক-এগারোর সরকারের দায়ের করা মামলাগুলো অব্যাহত রেখে সেগুলো ফরমায়েশি রায় দিয়ে তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করেছে। যা আজও অব্যাহত আছে।'

দুর্নীতি দমন কমিশন বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, যেসব সম্পত্তির মালিক তারেক রহমান নন, কোনো দলিলে বা চুক্তিতে যেখানে তারেক রহমানের নাম, স্বাক্ষর বা সংশ্লিষ্টতা নেই, তাকে সেসব সম্পত্তির গায়েবি মালিক বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি তারেক রহমান এবং ডা. জোবাইদা রহমানের কর পরিশোধকৃত সম্পদ নিয়েও কাল্পনিক অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারের নির্মম প্রতিহিংসায় দেশ আজ পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। দেশে বিরাজমান সীমাহীন দুর্নীতির মহাতাণ্ডব দুদকের চোখে পড়ে না।'

'২০০০ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কলঙ্কের তিলক তৎকালীন আওয়ামী সরকার লাগিয়েছিল। বর্তমানে আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুগত ব্যবসায়ী ও নেতাকর্মীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ দুদক নেয় না। জনগণকে বিভ্রান্ত ও আন্দোলন দমন করতে নেতাদের বিরুদ্ধে আবারও চক্রান্ত শুরু করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আর এই চক্রান্তের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দুদক,' বলেন তিনি।

মোশাররফ আরও বলেন, 'তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তা অবান্তর, ভিত্তিহীন, অমূলক। যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তা প্রতিহিংসামূলক ফরমায়েশি। এসব মামলা, আদেশ, রায় দিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ বা ডা. জোবাইদা রহমানকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারবে না এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চলমান আন্দোলন বিভ্রান্ত বা নস্যাৎ করতে পারবে না।'

বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আসা আদেশ বাতিল ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান মোশাররফ।

সংবাদ সম্মেলন শেষে স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।

Comments