‘আবার এই সরকার পাতানো ও সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করতে চলেছে’

মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ফটো

দশম ও একাদশ সংসদের মতো 'তামাশা'র নির্বাচন এবার জনগণ হতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার বিকেলে উত্তরা পূর্ব থানার আউয়াল অ্যাভিনিউ সড়কে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ হুঁশিয়ারি দেন।

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ মনে করেছে তারা এভাবে গত দুইটা নির্বাচন করেছে এবারো ওইভাবে নির্বাচন করে নিয়ে যাবে। আর আবারো সেইভাবে জনগণকে শোষণ করবে, জনগণের সম্পদ লুটে নিয়ে যাবে।'

'এবার আমরা আর কোনো নির্বাচন, সেই তামাশার নির্বাচন, আওয়ামী লীগের নির্বাচন হতে দেব না,' বলেন মির্জা ফখরুল।

নেতা-কর্মীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আমাদের এই আন্দোলন জনগণের অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলন, আমাদের এই আন্দোলন সমগ্র মানুষের যে কথা বলার অধিকার, সেই অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলন।'

তিনি বলেন, '১৫ বছর ধরে আমরা এই আন্দোলনে আছে, পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকব। আমরা শান্তির সঙ্গে আন্দোলন করছি, শান্তির সঙ্গে এই আন্দোলনে থাকব। আমাদের বাধা দিলে সেই বাধা অবশ্যই আমরা অতিক্রম করে যাব। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এই জনগনণবাধা প্রতিরোধ করবেই করবে।'

যুগপত আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য, বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ মহানগর ও জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।

'কোন সংবিধানে নির্বাচন?'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান নিজের মতো করে কাটাছেঁড়া করে তোমাদের মতো করে ছাপিয়ে নিয়েছ সেখানে জনগণের কোনো অধিকার নাই- সেই সংবিধান?"

'যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারে না, ভোট দিতে যায় না। ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচন মানুষ ভোট দিতে পারে নাই, মানুষ ভোট দিতে যায়নি। ভোট কেন্দ্রগুলোতে কুকুর-বিড়াল দেখা গেছে।'

তিনি বলেন, 'আবার এই সরকার একটা পাতানো নির্বাচন, সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করতে চলেছে। তারা বার বার করে বলছে, ভোট হবে এই সরকারের অধীনে। এই সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে ভোট কখনো নিরপেক্ষ হতে পারে? এই ভোট নিরপেক্ষ হতে পারে না।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এদেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সবার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তবেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের মাধ্যমেই জনগনের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার গঠন করতে হবে।'

বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে 'নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের' দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, 'আজকে এমন এক অবস্থা তৈরি করেছে সরকার যে, তাদের জনগণের প্রতি জবাবদিহি নেই, দায়দায়িত্ব নেই। পার্লামেন্ট একটা আছে … জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।'

'তারা দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়েছে, অর্থনীতি চালু রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কথায় কথায় বলে বৈর্শ্বিক অবস্থার কারণে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কখনোই না। তাদের দুর্নীতির কারণে সমস্ত সমস্যা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।'

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ফলাফল নিয়ে সরকারের 'অদক্ষতার' কঠোর সমালোচনা করেন ফখরুল।

সালাহউদ্দিন আহমেদের মুক্তি দাবি

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ অসংখ্য নেতা এখনো কারাগারে আছেন। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ তাকে গুম করে দেয়া হয়েছিল, তাকে গুম করে দেয়ার পরে ভারতে ফেলে রেখে আসা হয়েছিল। তাকে সেখানে মামলায় কারাবরণ করে। সেখানকার আদালত তাকে মুক্ত করে দিয়েছে।'

'এখন পর্যন্ত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা আজকে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক,' বলেন ফখরুল।

উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন।

গত ১০ ডিসেম্বর কমলাপুরে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকার পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপতভাবে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago