নির্বাচন শুধু আওয়ামী লীগের মনে

বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা তেমন উদ্বিগ্ন নয়।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী

জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নজর এখন দল পুনর্গঠনে।

দলটির অভ্যন্তর থেকে জানা গেছে, বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা তেমন উদ্বিগ্ন নয়।

দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরাতে আওয়ামী লীগের নেতারা কাজ করছেন। যাতে কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার 'স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস' উপলক্ষে গত বুধবার গণভবনে তার সঙ্গে দেখা করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এ সময় শেখ হাসিনা তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের নির্দেশ দেন এবং তা যতই গুরুতর হোক না কেন, আগামী জানুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। 

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য পুরোদমে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমরা নির্বাচনী প্রচারের কৌশল চূড়ান্ত করা, ইশতেহার তৈরি এবং মনোনয়নের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে বের করতে জরিপ কাজ চালানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছি।'

নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ ধরেই নিচ্ছে, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে।

'তবে আমাদের চূড়ান্ত নির্বাচনী কৌশল নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর।'

সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজের জোটে এনে ভোট বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির অভ্যন্তর থেকে জানা গেছে, সময়ের সঙ্গে '১৪ দলীয় আদর্শিক জোটের' বেড়ে যাওয়া দূরত্ব কমাতে তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বাচাই করতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জরিপ চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি আসন থেকে ৩ জন উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করতে আরও কিছু জরিপ করা হবে। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হবে।

শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা ২৭টি জেলা ইউনিটের নেতাদের ডেকে আলোচনায় বসেন। এর মধ্যে ৯টি জেলায় আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কাউন্সিল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

১৮টি জেলার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্যদের নামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ এলাকায় গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে এবং ত্যাগ স্বীকার করে হলেও দলের মনোনীত প্রার্থীর হয়ে প্রচারে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল বিএনপির সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পরিকল্পনা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়, তার কারণ রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানের কারণে জনগণ দলটিকে প্রত্যাখ্যান করবে। 'আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি, এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি 'স্মার্ট বাংলাদেশের' অঙ্গীকার তুলে ধরা হবে।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে আরও জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম প্রধান বিষয় হবে, ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্জন তুলে ধরা।

আওয়ামী লীগের কর্মীরা বর্তমান সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের কর্মকাণ্ডের তুলনা করবে এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন।

 

Comments