ছবি যা বলছে, বাস্তবতা তা নয়

ভাই-ভাতিজার ভোট পাবেন কি না মন্তব্যে নারাজ খায়ের আবদুল্লাহ
খোকন সেরনিয়াবাত সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পৌঁছালে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও তার বড়ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ তাকে বুকে টেনে ঐক্যের বার্তা দেন। ছবি: সংগৃহীত

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ তার ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে জড়িয়ে ধরার কয়েকটি ছবি সম্প্রতি বরিশালের তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়। তারা মনে করেছিল, এটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দুই পক্ষকে এক করতে সক্ষম হয়নি এবং হাসানাতের নেতৃত্বাধীন গ্রুপকে বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে কাজ করাতে পারেনি। বরং নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দলীয় মেয়র প্রার্থী নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে।

গত রোববার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আনিসুর রহমান শরীফ অভিযোগ করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (আইএবি) মেয়র মনোনীত মেয়র সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের প্রচারণায় ৩ কোটি টাকা দিয়েছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।

'আমাদের (খায়েরের অনুগতদের) বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তিনি ১০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে কমপক্ষে তিন জন প্রার্থী দিয়েছেন। তাদের নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে,' এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন আনিসুর।

তার বক্তব্যের পর রোববার রাতে আনিসুরকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে মহানগর আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে হাসানাত আবদুল্লাহর বক্তব্য জানতে পারেনি ডেইলি স্টার।

এর আগে আনিসুর অভিযোগ করেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহমুদ তারিক আইএবিপন্থী কাউন্সিলর প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন।

হাসানাতের সমর্থক হিসেবে পরিচিত তারিক এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং আনিসুর তাকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ১৫টিতে এ ধরনের বিরোধ রয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে নগরীর ব্যান্ডরোড এলাকায় খায়ের আবদুল্লাহর উপস্থিতিতে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়।

জানা যায়, মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী শেখর চন্দ্র দাস ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মঞ্চে উঠতে গেলে তার প্রতিপক্ষ তাকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায় এবং ১০ জন আহত হয়।

হাসানাতের সমর্থক নগর শাখা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাশ অভিযোগ করেন, তার লোকজনকে পুলিশে হয়রানি করেছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশ কাউকে হয়রানি বা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে না... ফৌজদারি মামলার আসামিদের শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।'

উভয় গ্রুপের সোর্স ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে যে খায়ের এবং হাসানাতের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ পৃথক প্রচার কমিটি গঠন করেছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাদিকের সমর্থক সারোয়ার হোসেন রাজীব বলেন, তারা আলাদাভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের ৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয় দল এই কোন্দল নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রোববার রাতে দলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে নির্বাচিত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।'

'... দলের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এগুলো কে উপেক্ষা করে প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণাকে বেগবান করতে হবে। সবাইকে সমান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে বিবেচনা করা উচিত,' নানকের বরাত দিয়ে বৈঠক সূত্র জানা গেছে।

এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগ খায়েরকে মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে মেয়র সাদিক বরিশালের ওপর তার শক্ত নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

4h ago