২৭ জুলাইয়ের সমাবেশ: রাজধানীর ‘দখল’ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপির মহাসমাবেশ মোকাবিলায় ‘শান্তি শোভাযাত্রা’ আয়োজনের পাশাপাশি, দলটি তার নেতাকর্মীদের শহরজুড়ে সতর্ক অবস্থায় রাখবে।
২৭ জুলাইয়ের সমাবেশ

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করে নগরীকে অচল করে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ আগামীকাল সকাল থেকে ঢাকা মহানগরজুড়ে তাদের কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় পাহারায় বসানোর পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল রাজধানীতে তাদের শক্ত অবস্থান বজায় রাখবে।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপির মহাসমাবেশ মোকাবিলায় 'শান্তি শোভাযাত্রা' আয়োজনের পাশাপাশি, দলটি তার নেতাকর্মীদের শহরজুড়ে সতর্ক অবস্থায় রাখবে।

এ ছাড়া, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশে দলের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য রেকর্ড জনসমাগম নিশ্চিত করতে চায় দলটি।

এই সমাবেশের আয়োজন করছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (উত্তর ও দক্ষিণ) নেতাকর্মীরা নিজ নিজ ইউনিট কার্যালয়ে অবস্থান করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নগর শাখার নেতাকর্মীরা আগামীকাল সকাল থেকে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন কারণ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির পরিকল্পনা সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এখনো অন্ধকারে।

সমাবেশে বিএনপি কর্মীদের যোগদানে কোনো বাধা না দিতে কর্মীদের বলা হয়েছে, একই সঙ্গে বিএনপি শহরের রাস্তাঘাটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কায় তাদের সতর্ক এবং প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, শাপলা চত্বরের মতো আরেকটি ঘটনার আশঙ্কাও করছে আওয়ামী লীগনেতৃত্ব।

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের তীব্র সংঘর্ষে রাজধানী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তারা শত শত দোকান, যানবাহন ও পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং দোকানপাট লুট করে।

বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর সমাবেশ ছাড়াও আওয়ামী আন্দোলনের সমাবেশস্থলের বেশ কাছেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে একই দিনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আইএবি) যে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে, তা নিয়েও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা উদ্বিগ্ন।

আইএবি বিএনপির শরিক না হলেও সম্প্রতি দলটির এক দফা আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। আগামীকালের প্রতিবাদ সমাবেশে তারা সংসদ ও নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা এবং লাউড স্পিকার ব্যবহার করে সমাবেশে জনগণকে আমন্ত্রণ জানানো থেকে বিরত রাখাসহ সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপনের পাশাপাশি রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে মেটাল ডিটেক্টরসহ অতিরিক্ত পোস্ট বসাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারে গোয়েন্দাদের নেতৃত্বে অভিযান চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সমাবেশের ফুটেজ ধারণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে এবং সমাবেশস্থলের চারপাশে নজরদারি বাড়ানোর জন্য ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে।

পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি নিশ্চিত করতে চেক পোস্টগুলোতে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হবে। নিরাপত্তা জোরদারে ইউনিফর্ম পরা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সাদা পোশাকে কর্মকর্তারাও থাকবেন।

শেষ মুহূর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেবে ডিএমপি। ডিএমপি সূত্র জানায়, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ যাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে পারে, সেজন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বিএনপির সমাবেশস্থলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, জনসেবক হিসেবে পুলিশ সব পক্ষকে সমাবেশের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। তবে সহিংসতা ও নৈরাজ্য উস্কে দেওয়ার কোনো চেষ্টা বরদাশত করা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, সব ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যদিও এই মুহূর্তে কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বা প্রচেষ্টার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, 'যে কোনো ধরনের অননুমোদিত কার্যকলাপ বন্ধ এবং অনুষ্ঠান চলাকালে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা আরও সতর্কতা অবলম্বন করছি।'

'শান্তি শোভাযাত্রা'য় বিশাল জনসমাগম নিশ্চিতে বৃহত্তর ঢাকা বিশেষ করে রাজধানী সংলগ্ন উপজেলাগুলো থেকে দলীয় কর্মীদের, বিশেষ করে তরুণদের আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে আওয়ামী লীগ।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, সমাবেশ সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তাদের সক্রিয়তা বাড়ানো এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করতে ঢাকা জেলার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সংঘাতের সম্ভাবনা এড়াতে 'শান্তি শোভাযাত্রা'র তারিখ পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিল বিএনপি তবে ক্ষমতাসীন দল তা প্রত্যাখ্যান করে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিএনপি অপ্রত্যাশিত আচরণকারী দল, তারা যেকোনো কিছু করতে পারে।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করতে সহিংস কর্মকাণ্ডে যেতে পারে। তাছাড়া শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনাও আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। কিন্তু আমরা বিএনপিকে এমন কিছু করতে দেব না, যাতে দেশের মানুষের ক্ষতি হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা শেষে দলের নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা মাঠে সতর্ক থাকব। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে আমরা তাদের প্রতিহত করব।'

Comments