শনিবার ঢাকার সব প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি: মির্জা ফখরুল

মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে আগামীকাল শনিবার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

শনিবার সকাল ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসমাবেশে এ ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমি আশা করব প্রশাসন এই কর্মসূচীকে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে দিয়ে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে। আমরা এটাও আশা করব, কাল ছুটির দিনে সকল দল মিলে একসঙ্গে এই কর্মসূচি পালন করব।'

মহাসমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই মহাসমাবেশ কোনো সাধারণ সমাবেশ নয়। এই সমাবেশ বাংলাদেশের পরিবর্তনের একটি মাইলফলকে পরিণত হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল। সেটা পরিবর্তন করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সম্ভাবনাকে যারা বিনষ্ট করতে চেয়েছিল, তারা পারেনি। তারই যোগ্য উত্তরসূরি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতার পতাকা হাতে নিয়ে সামনে বেড়িয়ে এসেছিলেন গৃহবধূ থেকে।'

'দলের তরুণ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং একটি সংসদীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন', যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগের অনির্বাচিত বেআইনি সরকার, অসাংবিধানিক সরকার বারবার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে, জনগণকে বোকা বানিয়ে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সেটা করতে গিয়ে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, ব্যবহার করেছে। বিচার ব্যবস্থাকে তারা দলীয়করণ করার চেষ্টা করেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের সামনে মাত্র একটি লক্ষ্য, আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ফিরে চাই। আমরা সেই বাংলাদেশ ফিরে চাই, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ জিয়া দেখেছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেখেছিলেন।'

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহার স্মরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনাদের মনে আছে নিশ্চই, এই সরকার বলেছিল আপনাদের ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। এখন ৮০ টাকা ৯০ টাকা কেজি চাল। বলেছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। সেই চাকরি কি আমাদের ছেলেরা পেয়েছে কেউ? পায়নি। সেই চাকরি তারা আওয়ামী লীগের ছেলেদের এবং টাকার বিনিময়ে দেয়। আজকে বিদ্যুতের দাম, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে সাধারণ মানুষ তাদের জীবনযাত্রা চালাতে পারছে না। বিদ্যুতে নাকি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এমন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে যে সারা বাংলাদেশে কোথাও বিদ্যুৎ নেই, ১০ মিনিট পরপর বিদ্যুৎ যায়, সব ঢাকা শহরে নিয়ে এসেছে। বিদ্যুৎ থেকে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে, বিদেশে পাঠিয়েছে।'

'বাংলাদেশ থেকে গত ১৪ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে' দাবি করে তিনি বলেন, 'এ দেশের মানুষ বিভিন্ন দেশে কাজ করে যে টাকা পাঠায়, সেটা দিয়ে আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। আর সেই টাকা তারা চুরি করে, দুর্নীতি করে বিদেশে পাঠায়। নতুন একটা কায়দা তারা শুরু করেছে। বহু টাকা তারা আমেরিকায় পাঠিয়েছিল। এখন সেই টাকা আমেরিকা থেকে দেশে ফেরত আনছে। সরকার নিয়ম করেছে, দেশে ফেরত আনলে আড়াই পারসেন্ট ইনসেন্টিভ পাবে। অর্থাৎ, চুরিও করবে, বিদেশেও পাঠাবে, আবার আড়াই পার্সেন্ট ইনসেন্টিভও নেবে।'

তিনি বলেন, 'সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা তারা করেছে, আমার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণ আর ভোট দিতে যায় না।'

তিনি আরও বলেন, 'সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে আমরা একমত হয়েছি যে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, কারণ জনগণ সেখানে ভোট দিতে পারবে না। সরকারকে পদত্যাগ করে, সংসদ বিলুপ্ত করে, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।'

যারা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা রাষ্ট্রের সংস্কার করব, মেরামত করব, নতুন করে রাষ্ট্রকে সাজাবো।'

'বিচার ব্যবস্থা দলীয় সরকারের নির্দেশে কাজ করতে শুরু করেছে' অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।'

'শুধু আমরা নই, আন্তর্জাতিক বিশ্বও বলছে, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। এখনো সময় আছে, আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

5h ago