জনগণের ভোটের অধিকার এখন জনগণের হাতে: প্রধানমন্ত্রী

‘এক সময় তারা এটার প্রতিবাদ করতো, এখন তারা দাবি করে আবার আগামীতে কী করবে, এর তো কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই!’
জনগণের ভোটের অধিকার এখন জনগণের হাতে: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার পথ নেই জানিয়েছে এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার এখন জনগণের হাতে। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তারাই সরকার গঠন করবে।

আজ শনিবার ভয়েস অব আমেরিকা সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া। দ্য ডেইলি স্টার পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের একটি অংশ হুবহু প্রকাশ করছে।

বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। আপনারা বলছেন, সংবিধানে এর সুযোগ নেই কিন্তু সংবিধান সংশোধন করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংসদে আপনাদের রয়েছে। সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ কি আপনারা নেবেন বা বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবেন—জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, 'এই তত্ত্বাবধায়কের জন্য বিএনপি যখন ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে তখনই আমরা আন্দোলন করেছিলাম। ভোট চুরি যখন করে, তখন। তখনই কিন্তু পাবলিক ওটা চাচ্ছিল। তখন বিএনপির নেত্রী বলেছিল, পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নাকি নিরপেক্ষ নাই। এটা তাদেরই কথা। তারাই এর বিরুদ্ধে ছিল।

'দ্বিতীয় কথা হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তো নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালে। কারণ বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬-এ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, দুর্নীতি, তাদের স্বজনপ্রীতি, মানি লন্ডারিং; যত রকমের অপকর্মের কারণে বাংলাদেশে ইমার্জেন্সি ডিক্লিয়ার হয়। তখন কিন্তু এই কেয়ারটেকার সরকার আসে। দুই বছর কিন্তু তারা ইলেকশন দেয়নি। বরং আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-টামলা দিয়ে হয়রানিও করে। তারপরে যখন ২০০৮-এ নির্বাচন হলো, সেই নির্বাচনটাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি কয়টা সিট পেয়েছিল? ৩০০ সিট আমাদের। বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতসহ ২০ দলীয় ঐক্যজোট সিট পেয়েছিল মাত্র ২৯টি। আর পরে রিইলেকশনে একটা—৩০টি। কাজেই তাদের অবস্থানটা ওই জায়গায়। ওই কেয়ারটেকারের অধীনে নির্বাচনেই তাদের এই অবস্থানটা,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'যার জন্য তারা ২০১৪-এর নির্বাচন বয়কট করে এবং সেটা বানচাল করার জন্য অগ্নিসন্ত্রাস করে। তখন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে। আমি আগেই বলেছি, তিন হাজারের উপরে মানুষকে তারা পুড়িয়েছিল। হাজার হাজার গাছ তারা কেটে ফেলে। রাস্তা কেটে ফেলে। এইভাবে তারা তাণ্ডব করেছিল। ৫০০-এর মতো ভোটকেন্দ্র পুড়িয়েছিল, স্কুল পুড়িয়েছিল। এজলাসে বসা জজ সাহেবের ওপর বোমা মেরে হত্যা করে। আইনজীবী হত্যা করে। এটা ধ্বংসযজ্ঞ তারা চালাচ্ছিল। তারা নির্বাচন বয়কট করেছিল।

'এর পরে আসল ১৮-এর নির্বাচন। তখন তারা অংশগ্রহণ করল। সেখানে ৩০০ সিটে প্রায় সাড়ে ৭০০ নোমিনেশন। কারণ লন্ডন থেকে একটা নোমিনেশন আসে, তাদের গুলশান অফিস থেকে একটা যায় আর পুরানা পল্টন অফিস থেকে একটা যায়। এভাবে যখন একেক সিটের পেছনে দুই জন-তিন জন করে নোমিনেশন দিয়ে নিজেরা নিজেরা গণ্ডগোল করে একটা পর্যায়ে তারা নির্বাচন থেকে সরে যায়। সেই নির্বাচনেও তারা ফেইল করে। যে কয়জন ইলেকশন করেছিল, তার মধ্যে তারা জিতেছিল কয়েকজন,' বলেন তিনি।

বিএনপি কখনো সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করেনি মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'তারা সুষ্ঠুভাবে ইলেকশন করতে চায় না। এবার হঠাৎ তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কেন? প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের নেতাটা কে? মানুষ ভোট দেবে কাকে? মানুষ একজন নেতৃত্ব দেখতে চায় যে, তাকে ভোট দিলে ভবিষ্যতে সে এই দেশ চালাবে। বিএনপি কি তেমন কাউকে সামনে আনতে পেরেছে, যাকে নিয়ে তারা ইলেকশন করবে?'

তিনি বলেন, 'বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের ২০ দলীয় জোট আছে এই পর্যন্ত কিন্তু নেতৃত্ব কোথায়! যে সামনে দেশ পরিচালনা করবে। তৃতীয় কথা হচ্ছে, ইলেকশন; এটা তো জনগণের ভোটের অধিকার। যখন ২০০৭ সালে ইমার্জেন্সি ঘোষণা হলো, এর পরে উচ্চ আদালতের রায় ছিল যে, বাংলাদেশে আর কেউ বা অনির্বাচিত সরকার বাংলাদেশে আসতে পারবে না। একটা নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে আরেকটি নির্বাচিত সরকারই আসতে হবে। জিয়াউর রহমান যে ক্ষমতা দখল করেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর জেনারেল এরশাদ এভাবে মার্শাল ল দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। সেই ক্ষমতাকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ওই রায়েই বলা হয়, আর কখনো অনির্বাচিত কেউ সরকারে আসতে পারবে না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সর্বোচ্চ আদালত থেকেই কিন্তু এটা ঘোষণা করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন করে এই রায়কে কার্যকর করা হয়। এখন আবার সেই উচ্চ আদালতের রায় আমরা কীভাবে ফেরত দেবো বা কীভাবে আবার সংবিধান সংশোধন করব? আর কেনই বা আমরা করব? কারণ আমাদের তো তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। এর পূর্বে যেসব ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে, হয় মার্শাল ল—মিলিটারি ডিকটেটরশিপ; তাদের অধীনে নির্বাচনী প্রহসন, এর পরে আবার কেয়ারটেকারের অধীনে সেই নির্বাচনী প্রহসন।'

তিনি বলেন, 'এ রকম একেকবার একেকটা ঘটনা ঘটতে ঘটতে আজকে বাংলাদেশ, যেহেতু ২০০৮ এর নির্বাচনের পর ২০০৯-এ সরকার গঠন করে আজকে ২০২৩ পর্যন্ত একটা স্থিতিশীল অবস্থা; যেটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য অনেক রকমের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সংঘাত, অগ্নি সংযোগ, অনেক কিছুই করা হয়েছে। সেগুলো সব মোকাবিলা করে বাংলাদেশ যখন আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, সেটা কার্যকর করা একান্তভাবে অপরিহার্য। সেখানে আমাদের নির্বাচিত সরকারই তো দরকার। মাঝখানে আমি অনির্বাচিত সরকার কোথা থেকে আনব?'

'এক সময় তারা এটার প্রতিবাদ করতো, এখন তারা দাবি করে আবার আগামীতে কী করবে, এর তো কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই! তাছাড়া, এই পদ্ধতিটা তো বিএনপি নষ্ট করেছে। তারা তাদের মন মতো সরকার বসানোর জন্য উচ্চ আদালতের জজের বয়স বাড়ানো, এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা করা, নানা ধরনের অপকর্ম তারা করেছিল। কোনোটা কাজে লাগেনি। কারণ জনগণ এটা মেনে নয়নি। জনগণের ভোটের অধিকার এখন জনগণের হাতে। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তারাই সরকার গঠন করবে। কাজেই এখন আর সেখানে ফিরে যাওয়ার তো পথ নেই! এখন আমাদের সংবিধানেও সুরক্ষিত করা আছে জনগণের ভোটের অধিকার; নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে নির্বাচিত সরকারই আসবে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
pharmaceutical industry of Bangladesh

Pharma Sector: From nowhere to a lifesaver

The year 1982 was a watershed in the history of the pharmaceutical industry of Bangladesh as the government stepped in to lay the foundation for its stellar growth in the subsequent decades.

17h ago