আওয়ামী লীগ নির্ভার, নির্বাচন পর্যন্ত চাপে রাখবে বিএনপিকে

গত কয়েক মাস ধরে পশ্চিমা বিশ্বের যে চাপের মধ্যে পড়েছিল আওয়ামী লীগ, শনিবারের ঘটনার পর তা কিছুটা কমে আসতে পারে বলে আশা করছেন দলের নেতারা।

গত শনিবার দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যা যা হলো তাতে আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে বলে দাবি করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

তারা বলছেন, বিএনপি মহাসমাবেশ করে যে গতি সঞ্চারের চেষ্টা করেছিল তা সফল হয়নি এবং সেদিনের ঘটনা 'দলের নেতাকর্মীদের মনোবলে আঘাত করেছে'।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, শনিবারের বেশিরভাগ সহিংসতার ঘটনা হয়েছিল বিএনপি এবং পুলিশের মধ্যে। এতে বিএনপির অবস্থান চলে গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে।

গত কয়েক মাস ধরে পশ্চিমা বিশ্বের যে চাপের মধ্যে পড়েছিল আওয়ামী লীগ, শনিবারের ঘটনার পর তা কিছুটা কমে আসতে পারে বলে আশা করছেন তারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, পুলিশ বক্স ও অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিএনপি নিজেই তার প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে দিয়েছে, যে তারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।'

'এখনই তাদের ওপর ভিসা নীতি কার্যকর হওয়া উচিত,' বলেন তিনি। 

শনিবার রাতে মার্কিন দূতাবাসের দেওয়া বিবৃতির কথা উল্লেখ করেন বাহাউদ্দিন নাছিম। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র 'সম্ভাব্য ভিসা বিধিনিষেধের জন্য সব সহিংস ঘটনা পর্যালোচনা করবে'।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বিএনপি দেখানোর চেষ্টা করেছে যে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু শনিবারের সহিংসতা এটাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, 'বিএনপি-জামায়াত জোট আবারও দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে "নৃশংস কর্মকাণ্ডে" লিপ্ত হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'যদিও বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলে। কিন্তু গোপনে তারা সন্ত্রাসের রাজনীতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের জন্য আবারও তারা তাদের মজ্জাগত সন্ত্রাসী পথ বেছে নিয়েছে।'

সেদিনের সহিংসতার মাত্রা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ নেতারা এটাও মনে করছেন যে, নিজেদের কর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই বিএনপির।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনোভাবেই দাঁড়াতে পারবে না। বিশেষ করে শনিবার পুলিশের অ্যাকশনের পরপরই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে মঞ্চ ত্যাগ করেছিলেন তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বীকার করেছেন যে, বিএনপির সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও অস্বস্তি ছিল। তবে শনিবারের ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন প্রায় অসম্ভব।

গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শনিবারের সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির বিরুদ্ধে কঠোর হবে।

তিনি বলেন, 'পুলিশ, সাংবাদিক ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা ও মারধর করে বিএনপি তাদের প্রকৃত চরিত্র দেখিয়ে দিয়েছে এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।'

এদিকে আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে বিএনপিকে এক ইঞ্চিও ছাড় দেওয়া হবে না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর বিএনপি তিনদিনের 'দেশব্যাপী অবরোধ' কর্মসূচি দিয়েছে। রাজধানীতে বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়াও প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও থানায় শান্তি সমাবেশ করবে দলটি।

এই তিন দিনে শেষ চেষ্টা হিসেবে বিএনপি অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা করার চেষ্টা করলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সারাদেশের প্রতিটি ইউনিট থেকে বিএনপিকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকবেন বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।

 

Comments