প্রিজনভ্যান দেখলেই ‘বাবা বাবা’ বলে চিৎকার করছিল ২ বছরের মেহরীন

মানিককে দেখার আশায় সিএমএম আদালতের সামনে তার পরিবারের অপেক্ষা। মেয়ে মেহরীনের চোখ কেবল খুঁজে বেড়াচ্ছে বাবাকে। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে মায়ের কোলে দুই বছর বয়সী মেহরীন আক্তার। মা তানিয়া বেগমের সঙ্গে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তার অপেক্ষা বাবাকে দেখার জন্য।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকেও বাবার দেখা না পেয়ে অনেকবার কেঁদেছে মেহরীন। মা তানিয়া বিভিন্ন গল্প বলে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো প্রিজনভ্যান সামনে দেখলেই সে 'বাবা বাবা' বলে চিৎকার করে উঠেছে।

আদাবর থানার ১০০ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম মানিকের মেয়ে মেহরীন। গত পাঁচ দিন বাবাকে না পেয়ে জীবনের প্রথম আজ আদালতের প্রাঙ্গণে সে। মায়ের সঙ্গে রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বাবা আসবে বলে।

শরিফুল ইসলাম মানিক। ছবি: সংগৃহীত

সকাল থেকে মেয়েকে কিছু খাওয়াতেও পারেননি তানিয়া। বাবা না এলে কিছুতেই খাবে না মেহরীন।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তানিয়া বলেন, 'কয়েকদিন আগেও আমার স্বামীকে দেখতে আদালতে এসেছিলাম। সেদিন মেয়েকে আনিনি। সঙ্গে আনিনি বলে সারাদিন বাড়িতে কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আজ তাই বাধ্য হয়েই সঙ্গে এনেছি।'

পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের বাড়ি ঢাকা উদ্যান এলাকার তুরাগ হাউজিংয়ে। গত ৩ নভেম্বর ভোররাত ১টা ২০ মিনিটে মেহরীনের বাবা মানিককে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

মানিকের স্ত্রী তানিয়া বলেন, 'আমার স্বামী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটা আমরা জানি না। আমার স্বামী কী করছেন, কেন কারাগারে আছেন—এসব বিষয়ে পুলিশও কিছুই বলছে না।'

তিনি আরও বলেন, '৩ নভেম্বর সকালে আমি আমার স্বামীকে মোহাম্মদপুর থানায় দেখেছি। এরপর থেকে তাকে আর দেখিনি। ২৫ অক্টোবরের পর বিএনপির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করায় তিনি ভয় পেয়ে যান। কিন্তু তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তিনি রাজনীতি করেন এবং ফটোসাংবাদিক হিসেবে একটি পত্রিকায় কাজ করেন।'

প্রিজনভ্যান এলেই মানিকের খোঁজে দৌড়ে যাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

শুধু মানিকের স্ত্রী ও মেয়ে নয়, তার মা শেফালী বেগমও (৫০) ছেলেকে দেখার আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

কোনো পুলিশ ভ্যান দেখলেই তিনি সেটার দিকে ছুটে যান ছেলেকে একনজর দেখতে। প্রতিটি পুলিশ ভ্যানেই তিনি নিজের ছেলেকে খুঁজেছেন। ছেলেকে দেখতে গত পাঁচ দিন ধরে তিনি থানা, আদালত, কারাগারে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

কান্নারত শেফালী বলছিলেন, 'আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও, প্রয়োজনে আমাকে জেলে ঢোকাও।'

তিনি বলেন, 'আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। ছেলেটা কেমন আছে জানি না। আমাকে কেউ বলেন, আমার ছেলেটা কেমন আছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

CSA getting scrapped

The interim government yesterday decided in principle to repeal the Cyber Security Act which has been used to curb press freedom and suppress political dissent.

4h ago