চট্টগ্রাম-১১ আসন: বাবা নৌকার প্রার্থী, ছেলে স্বতন্ত্র
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা থামছেই না।
এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী এম আবদুল (এম এ) লতিফ। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর একই আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছেন ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।
এই একই আসন থেকে আব্দুল লতিফের ছেলে ব্যবসায়ী ওমর হাজ্জাজ প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তিনি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। ২০২৩-২০২৫ মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ওমর হাজ্জাজ রিলায়েন্স ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী।
কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন গত ২৭ নভেম্বর তার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তার এক দিন পরেই মনোনয়ন নেন হাজ্জাজ।
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে জিয়াউল হক সুমন এক মত বিনিময় সভা করেন। ওই সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও সহসভাপতি নঈম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীসহ নগর ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভাষ্য, নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বন্দ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
আবার একই ঘর থেকে দুই জন প্রার্থী হওয়া নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে কানাঘুষা।
চট্টগ্রাম-১১ আসনে এখন পর্যন্ত ১৪ জন প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
লতিফ ২০০৮ সাল থেকে এই আসনের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালে মনোনয়ন পাওয়ার আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাকে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। ২০১৩ সালে লতিফ নগর আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য পদ পান।
এবার ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের দুই সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু।
বাবার বিপক্ষে নির্বাচনে দাঁড়ানোর বিষয়ে ওমর হাজ্জাজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোট থেকেই আমি মানুষের সঙ্গে চলি, বন্দর-পতেংগায় আমার জন্ম। এদের সঙ্গেই আমি দিন কাটাই। আমি তাদের সব থেকে ভালো করে জানি। আমিই তাদের সব থেকে বেশি ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারবো, তাদের দাবি-দাওয়া আমিই ভালো জানি, অনুভব করি।'
তিনি বলেন, 'আমার বাবা আমার প্রেরণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসেবে সবাই নির্বাচন করতে পারবেন, তাই আমিও মনোনয়ন নিয়েছি।'
ওমর বলেন, 'আমি রাজনীতিতে সক্রিয় না কিন্তু আমার বাবা রাজনীতি করেন। মানুষের সেবা করেছেন সৎ থেকেই। ব্যবসায়ী হিসেবে আমি বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে অনেক মিশেছি, আমার অভিজ্ঞতাও কম নয়। অনেকে সারা জীবন রাজনীতি করে এসেছে কিন্তু তাদের জীবনের লক্ষ্য কী? আমি ব্যবসায়ী কিন্তু আমজনতা।'
বাবার বিপক্ষে রাজনীতি করছেন না বলে জানান তিনি।
জিয়াউল হক সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে চায়। তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং তাদের কারণেই আমার নির্বাচনে আসা। তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আমার বলার কিছু নেই। নৌকার প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, 'স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, সাধারণ মানুষ আমাকে চায়। আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এসেছি। যারা মনোনয়ন নিয়েছেন তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।'
অন্যদিকে খোরশেদ আলম সুজন সাংবাদিকদের বলেছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি নির্বাচন করবেন না।
'দলীয় মনোনয়ন যিনি পেয়েছেন, তিনি দলের কেউ না। আমি না প্রতিদ্বন্দিতা না করলেও হয়তো দলের অন্য কেউ প্রার্থী হবেন। যিনি প্রার্থী হবেন তাকে দেখব,' বলেন সুজন।
Comments