অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর

সরকার যদি জেদ অহমিকা নিয়ে জবরদস্তি করে নির্বাচনের নামে আরেকটি তামাশা মঞ্চস্থ করতে চায়, তাহলে এই অশুভ তৎপরতা প্রতিরোধ করা ছাড়া দেশবাসীর সামনে অন্য কোনো পথ থাকবে না বলে জানিয়েছে বিএনপিসহ রাজপথে আন্দোলনরত সমমনা দলগুলো।
একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের যৌথসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ছবি: সংগৃহীত

সরকার যদি জেদ অহমিকা নিয়ে জবরদস্তি করে নির্বাচনের নামে আরেকটি তামাশা মঞ্চস্থ করতে চায়, তাহলে এই অশুভ তৎপরতা প্রতিরোধ করা ছাড়া দেশবাসীর সামনে অন্য কোনো পথ থাকবে না বলে জানিয়েছে বিএনপিসহ রাজপথে আন্দোলনরত সমমনা দলগুলো।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডে শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত 'একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের যৌথসভায়' এ কথা জানানো হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, আমরা রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ দীর্ঘদিন ধরে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছি। এজন্য আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও গ্রেপ্তারকৃত সব রাজবন্দির মুক্তি এবং বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কারের দাবিতে যুগপৎ ধারায় এক আন্দোলনে আছি। এই দাবিগুলো ইতোমধ্যে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
 
তারা বলেন, গণদাবির এই আন্দোলনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে সরকার ও সরকারি দল গত ২৮ অক্টোবর বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেয়। বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর এই দায় চাপিয়ে গত একমাস দমন নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের পথে দেশব্যাপী তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সরকার ও সরকারি দলের এইসব নৃশংসতায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করি, নিহত, আহত ও কারাবন্দিদের পরিবারের প্রতি আমরা সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

বক্তারা বলেন, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি সরকারের পদত্যাগের গণদাবিকে উপেক্ষা করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি একতরফা নীলনকশার নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। সরকারের এই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সরকারের সহযোগী হিসেবে নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। পাতানো এই নির্বাচনের অংশ হিসেবে আজ কথিত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখও নির্ধারণ করেছে। জনগণের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সমগ্র এই নির্বাচনের তফসিলকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। 

তারা বলেন, আমরা অনতিবিলম্বে ৭ জানুয়ারি ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।

বক্তারা আরও বলেন, আমরা সরকার ও সরকারি দলের সব ধরনের উস্কানি, সহিংসতা ও পরিকল্পিত নাশকতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে চলমান গণআন্দোলন গণসংগ্রামকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। এই আন্দোলনে সব বিরোধী রাজনৈতিক দল, শ্রেণী-পেশা ও সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম খান- সদস্য, স্থায়ী কমিটি, বিএনপি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান- চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ- চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী- চেয়ারম্যান, গণদল, খন্দকার লুতফর রহমান সভাপতি, জাগপা, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম- প্রধান সমন্বয়ক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, মুফতি মুহিউদ্দিন ইকরাম- মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, এম এন শাওন সাদেকী- চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ন্যাপ, মো. আবুল কাশেম- মহাসচিব, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ড. মো. নেয়ামুল বশির- প্রেসিডিয়াম সদস্য, এলডিপি, হারুন আল রশিদ খান- মহাসচিব, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, হারুন চৌধুরী- সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল), পারভীন নাসের ভাসানী- কো-চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, অ্যাডভোকেট মো. আজহারুল ইসলাম- চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), শামসুল আহাদ- ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় দল, অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল করিম- ইসলামী ঐক্যজোট, রাশেদ প্রধান- সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), মো. ফারুক রহমান- চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, শাহাদাত হোসেন সেলিম- মহাসচিব, বাংলাদেশ এলডিপি, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম- যুগ্ম আহ্বায়ক, এ বি পার্টি, ডা. সামছুল আলম- সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, ফারুক হাসান- সদস্য সচিব, গণঅধিকার পরিষদ, আবুল কালাম আজাদ- আহ্বায়ক, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাবুল সরকার চাখারী- চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, মাহমুদুর রহমান মান্না- সভাপতি, নাগরিক ঐক্য, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন- সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জোনায়েদ সাকি- প্রধান সমন্বয়কারী, গণসংহতি আন্দোলন, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু- আহ্বায়ক, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, সুব্রত চৌধুরী- সাধারণ সম্পাদক, গণফোরাম, কারী আবু তাহের- চেয়ারম্যান, এডিপি, সাইফুল হক- সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নুরুল হক নূর- সভাপতি, গণঅধিকার পরিষদ, জাভেদ সালাউদ্দিন- প্রেসিডেন্ট, জাস্টিস পার্টি, শাহ আহমেদ বাদল- মহাসচিব, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, ব্যারিস্টার নাসিম খান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, কমরেড ডা. নুরুল ইসলাম- বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল এবং খোকন চন্দ্র দাস- সভাপতি, ডিএল।

Comments