২ বছরে তৈমুরের সম্পদ বেড়েছে ৮ গুণ, তার স্ত্রী ফারজানার ৬৬ গুণ

অস্থাবর সম্পদের তালিকায় তৈমুর ও তার স্ত্রীর ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র রয়েছে, তবে তার মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।
২ বছরে তৈমুরের সম্পদ বেড়েছে ৮ গুণ, তার স্ত্রী ফারজানার ৬৬ গুণ
তৈমুর আলম খন্দকার ও তার স্ত্রী ফারজানা হালিমা (বাম থেকে) | ছবি: সংগৃহীত

'কিংস পার্টি' খ্যাত তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও তার স্ত্রী ফারজানা হালিমার সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে তৈমুরের সম্পদ বেড়েছে আট গুণ। অন্যদিকে ফারজানার সম্পদ বেড়েছে ৬৬ গুণ। ফারজানা পেশায় গৃহিনী।

গত বছর দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন তৈমুর। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন।

তৃণমূল বিএনপি থেকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন এই রাজনীতিক।

সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুসারে, তৈমুরের কেবল অস্থাবর সম্পদ ছিল নগদ পাঁচ লাখ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৮ টাকা এবং নগদ অর্থ ছয় লাখ ৫১ হাজার ৫০২ টাকা।

দুই বছর আগে ফারজানার কেবল দুই লাখ টাকা নগদ অর্থ ছিল। তার নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৬ টাকা। এছাড়া, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ৬০ লাখ টাকা।

হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, তার মোট এক কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৩৭২ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে, যা পূর্বের তুলনায় ৬৬ গুণ বেশি। এর বাইরে একটি মাইক্রোবাস কিনেছেন তিনি, যার মূল্য যোগ করা হয়নি হলফনামায়।

যোগাযোগ করা হলে তৈমুর আলম খন্দকার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাঁর স্ত্রী একজন গৃহিনী।

'আমার দুই কন্যা বিদেশে থাকে এবং আমার স্ত্রীর বেশিরভাগ আত্মীয়-স্বজন বিদেশে থাকেন। তারাই টাকা পাঠান,' আয়ের উৎস প্রসঙ্গে বলেন তৈমুর।

অস্থাবর সম্পদের তালিকায় তৈমুর ও তার স্ত্রীর ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র রয়েছে, তবে তার মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (আপিল বিভাগ) এই আইনজীবী তার ব্যবসা ও পেশার বিবরণীতে 'তৈমুর আলম খন্দকার অ্যাসোসিয়েটস' নামে একটি ল' ফার্ম রয়েছে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তিনি বই লেখেন এবং তার লেখা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়। বাড়ি ভাড়া, পেশা ও আমানতের বিপরীতে সুদ হিসেবে এই প্রার্থীর বার্ষিক আয় বর্তমানে বেড়ে ১২ লাখ ১৯ হাজার ২৪৮ টাকা হয়েছে, যা দুই বছর আগে ছিল আট লাখ এক হাজার ৬৪১ টাকা।

হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, তার কোনো ছেলে নেই। দুই মেয়ে আছে, যারা বিদেশে (আমেরিকা ও লন্ডন) থাকেন। ২০১৮ ও ২০২১ সালের হলফনামা অনুসারে, তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল শূন্য। তবে এবার তিনি তার নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন আট লাখ ৭৫ হাজার ৫৩ টাকা।

তৈমুরের স্থাবর সম্পদের তালিকায় রয়েছে, রাজউকের একটি পাঁচ কাঠা প্লট এবং ২৭৬ বর্গমিটারের একটি নির্মাণাধীন বাড়ি।

দুই বছর আগে যৌথ মালিকানার ২০০ শতাংশ কৃষি জমিতে নিজের ২২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং আরও ৩০ শতাংশ জমিতে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ মালিকানা থাকলেও তা এবার দেখাননি।

এ ব্যাপারে তৈমুর বলেন, 'আমি এই জমিগুলো বিক্রি করে দিয়েছি।'

তার স্ত্রীর নামে বর্তমানে রাজধানীর তোপখানা রোডে ৭৪ দশমিক ৩৪ বর্গমিটার স্পেস রয়েছে। আগে তার ৩১৪ বর্গমিটারের একটি ফ্ল্যাট ছিল।

তৈমুর দুই বছরে ১১ ভরি সোনার অলঙ্কার উপহার হিসেবে পেয়েছেন। আগে এর পরিমাণ ছিল পাঁচ ভরি। তার স্ত্রীর কাছে আগের মতোই এখন ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।

হলফনামায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তৈমুর আলম ও তার ওপর নির্ভরশীলদের কোনো ঋণ নেই।

তার বিরুদ্ধে ১৯৯৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি মামলা বিচারাধীন, বাকিগুলোতে তিনি খালাস বা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।

Comments