ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব যেন চিরস্থায়ী হয়: প্রধানমন্ত্রী

ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব যেন চিরস্থায়ী হয়: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমি চাই, আমার দেশের মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। আমাদের মতো যেন বিচারহীনতায় তাদের কষ্ট পেতে না হয়।'

আজ শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার একবিংশ শতাব্দীর সাংবিধানিক আদালত: ভারত-বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সংবিধানে তো বিচার পাওয়ার অধিকার সকলেই আছে কিন্তু সেখানে আমাদের প্রশ্ন যে, আমরা কি অপরাধ করেছিলাম? ১৯৮১ সালে ছয় বছর আমাকে প্রবাসে থাকতে হয়, কার‌ণ তখনকার মিলিটারি ডিকটেটর আমাকে আসতে দেবে না দেশে। রেহানাকেও আসতে দেবে না এবং তার পাসপোর্টটাও রিনিউ করতে দেয়নি।'

তিনি বলেন, 'সেই অবস্থায় আমাকে যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার অবর্তমানে নির্বাচিত করা হয়, এক রকম জোর করে—জনগণের সমর্থন নিয়েই আমি দেশে ফিরে আসি। আমি যখন আমার বাবা-মা, ভাইয়ের হত্যার বিচারের জন্য মামলা করতে যাই, সেখানে মামলা করা যাবে না। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এটা কেমন ধরনের কথা?

'মানবাধিকারের কথা শুনি, ন্যায় বিচারের কথা শুনি। সেই ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার কি আমাদের ছিল না? আমি অনেকবারই হাইকোর্টে গিয়েছি, অনেক অনুষ্ঠানে গেছি। আমি যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি, আমি বারবার এই প্রশ্নটাই করেছি, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। আমরা বিচার পাব না। আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমরা বঞ্চিত থাকব। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পরে, অর্থাৎ আমাকেই ক্ষমতায় আসতে হলো ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য,' যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'আমরা সরকারের আসার পর থেকে মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায়, তার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করি।'

এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন।

ভারতীয় অতিথিদের ভাগ্যবান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশ পাশাপাশি, রাষ্ট্র হিসেবে যখন প্রকাশ পেল আমরা কী দেখলাম? ভারতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। অন্তত আমরা সে পাকিস্তান আমলই হোক, আর বাংলাদেশ হবার পরে পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্টের পরে হোক, কী হয়েছে? আমরা পেয়েছি, মিলিটারি ডিকটেটরশিপ। বারবার আঘাত এসেছে গণতন্ত্রের ওপর। বারবার আঘাত এসেছে বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর। কোনো একটা স্থিতিশীলতা ছিল না। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করে আশা করেছিলাম যে, অন্তত আমাদের এই ভূ-খণ্ডের মানুষ একটা স্থিতিশীল জীবন পাবে। দেশের উন্নতি হবে, মানুষের উন্নতি হবে—জীবনমান উন্নত হবে।

'কিন্তু আমরা যদি হিসাব করি, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পরে সেই ৭৬ সাল থেকে ৯৬ পর্যন্ত এ দেশের মানুষ কী পেয়েছে? তাদের যে মৌলিক চাহিদাগুলো; কোনো চাহিদাই তো পূরণ হয়নি। হ্যাঁ, একের পর এক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই মিলিটারি ডিকটেটররা যারা এসেছে, হয়তো তারা লাভবান হয়েছে, মুষ্টিমেয় এলিট গ্রুপ তারা তৈরি করেছে কিছু মানুষকে সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়ে। আর সাধারণ মানুষ অবহেলিত থেকে গেছে। তাদের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, তাদের সাংবিধানিক অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। তারা অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিতই থেকে গিয়েছিল। এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ঠিক একই অবস্থার শিকার এ দেশের মানুষ। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, মামলা-মোকদ্দমা এবং আমরা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় আমাদের অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ কিন্তু সেই একই তিমিরে ছিল,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতিটা হচ্ছে, সেটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে এবং একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে, মানুষের জীবনে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি, আর্থ-সামাজিক উন্নতি, এটা একমাত্র হতে পরে যখন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ হয় এবং দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।'

আওয়ামী লীগ সরকারই বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিন্তু আইনের ছাত্র ছিলেন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে যেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন। তার কাছে প্রস্তাব গিয়েছিল, মুচলেকা দিয়ে এবং ১৫ টাকা ফাইন দিয়ে তিনি আবার ছাত্র হতে পারতেন। শেখ মুজিব তখন একজন ছাত্র। তিনি বলেছিলেন, আমি যদি মুচলেকা দেই আর যদি আমি এই অর্থ দেই, তার মানে হলো আমি আমার দোষ স্বীকার করে যাচ্ছি। আমি তো দোষ করি নাই। কাজেই আমি তা করব না। কাজেই তিনি সেই রাস্টিকেটই ছিলেন। বহু বছর পরে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র কয়েক বছর আগে; চার-পাঁচ বছর আগে বোধ হয় সেই রাস্টিকেট প্রত্যাহার করে। তিনি সব সময় স্বাধীন বিচার বিভাগে বিশ্বাস করতেন এবং তার আদর্শ নিয়েই আমাদের পথ চলা। স্বাধীন বিচার বিভাগ, শক্তিশালী পার্লামেন্ট এবং প্রশাসন একটি দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।'

ভারতীয় অতিথিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'আমি চাই, আমার দেশের মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। আমাদের মতো যেন বিচারহীনতায় তাদের কষ্ট পেতে না হয়। তারা যেন ন্যায় বিচার পায় এবং দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সুনিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ যেন এগিয়ে চলে এবং ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব যেন চিরস্থায়ী হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Ducsu: From student union to shaping Bangladesh’s politics

From Language Movement to anti-Ershad protests, Dhaka University’s student body left a lasting mark on national history

1h ago