‘ইউএনও সাহেব, আপনি আমার ক্লিয়ার মেসেজ পেয়েছেন?’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দল বা অন্য দলের কেউ যদি এখানে সমাবেশ করতে চায়, তাদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে অনুমতি নিতে হবে। আপনি আগামীকাল সমাবেশ করবেন আর আজকে অনুমতি নেবেন, এটা হবে না।’
সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অন্তত এক সপ্তাহ আগে আবেদন না করলে তার নির্বাচনী এলাকায় কোনো সমাবেশের অনুমতি না দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমাদের দল বা অন্য দলের কেউ যদি এখানে সমাবেশ করতে চায়, তাদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে অনুমতি নিতে হবে। আপনি আগামীকাল সমাবেশ করবেন আর আজকে অনুমতি নেবেন, এটা হবে না।'

গতকাল শুক্রবার আনোয়ারা উপজেলা মিলনায়তনে এক সভায় তিনি এসব কথা  বলেন।

সভায় তিনি বলেন, 'আজ থেকে আমার এই নির্দেশ কার্যকর হবে।'

মঞ্চে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দিকে ফিরে সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, 'ইউএনও সাহেব, আপনি আমার ক্লিয়ার মেসেজ পেয়েছেন?'

তিনি বলেন, 'এটা আমার নির্বাচনী এলাকা এবং আমি এই আসনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এখানে কোনো দ্বৈত শাসন থাকবে না।' 

কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, 'যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় (আমার নির্বাচনী এলাকায়), আমি খুব ভালো করেই জানি কীভাবে পরিস্থিতি ট্যাকল (সামাল) দিতে হয়।'

তবে স্থানীয়রা বলেছেন, তার বক্তব্য অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীদের উদ্দেশ্য করে দেওয়া। ওয়াসিকা একই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৩ মার্চ আনোয়ারা উপজেলায় আয়োজিত এক  সমাবেশে ওয়াসিকা প্রধান অতিথি ছিলেন। এর আগে ৯ মার্চ আনোয়ারা উপজেলায় ওয়াসিকাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়।  উভয় সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী।

যোগাযোগ করা হলে আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, 'সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সাইফুজ্জামানের নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'কাকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে এবং কাকে দেওয়া হবে না, সেটা বলার তিনি কে? প্রশাসনই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলার ইউএনও ইশতিয়াক ইমন বলেন, সমাবেশের আবেদনের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন নয়, পুলিশ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলেন, 'সমাবেশ যদি নগরীতে হয়, তাহলে পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নিতে হয় এবং নগরীর বাইরে হলে জেলা পুলিশ সুপারের অনুমতি নিতে হবে। উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয় না।'

এক সপ্তাহ আগে অনুমতির জন্য আবেদন না করলে কেন কাউকে সমাবেশ করতে অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সংসদ সদস্য, তা জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, 'আমি জানি না এমপি স্যার কেন এটা বলেছেন। আপনি বরং তাকে জিজ্ঞেস করুন।'

এই ব্যাপারে জানতে এই প্রতিবেদক সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

ওয়াসিকা আয়শা খানের ফোনেও কয়েক দফায় ফোন করা হয় তার বক্তব্য জানতে। কিন্তু তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

Comments