কাদের মির্জার বিরুদ্ধে হাতুড়ি-হেলমেট বাহিনী গঠনের অভিযোগ ছোট ভাইয়ের

‘রাস্তার কাজ চলছে সেখান থেকে কাদের মির্জা ১৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন’
কাদের মির্জা (বামে) ও শাহাদাত হোসেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হেলমেট ও হাতুড়ি বাহিনী গঠন এবং অবৈধ অস্ত্র মজুদের অভিযোগ তুলেছেন তার ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন।

আব্দুল কাদের মির্জা ও শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯ মে। এ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শাহাদাত।

শাহাদাতের অভিযোগ, শত কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে সোনাপুর-বসুরহাট-দাগনভূঁইয়া সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের ঠিকাদারি থেকে কাদের মির্জা ১৫ কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন। ফলে এই সড়কের কাজের মান খারাপ হয়েছে।

গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বড় রাজারামপুর মহল্লায় নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত এসব অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, 'আমার ছেলে আসাদ হোসেন নিশাদ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। সে কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছে। সে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। শনিবার রাত ৯টায় আমার ছেলে বসুরহাট হাইস্কুল মাঠে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার হেলমেট ও হাতুড়ি বাহিনীর ৮০-৯০ জন সন্ত্রাসী তাকে মারধর করে।'

তিনি দাবি করেন, 'তারা আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করে। উপস্থিত লোকজনের কারণে সেটা পারেনি। বসুরহাট পৌর মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।'

শাহাদাত বলেন, 'আমার ছেলেকে মারধর শুরু করার দুই মিনিটের মধ্যে কাদের মির্জার ছেলে তাশিক মির্জা কীভাবে সেখানে উপস্থিত হয়? মেয়রের ছেলে নিজেও পিতার এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।'

তিনি দাবি করেন, 'তাশিক মির্জা একটি কালো রংয়ের গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করে। এটাকে সে টর্চারসেল বানিয়েছে। যারা আমার টেলিফোন মার্কার ভোট করছে, তাদেরকে কালো রঙের গাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়।'

কাদের মির্জাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'তিনি অস্ত্রবাজ। হেলমেট বাহিনী গঠন করেছেন। হাতুড়ি বাহিনী গঠন করেছেন। তিনি মাস্তান পালেন। আমার ছেলেকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা জানাতে আমি নোয়াখালীর ডিসির কাছে ফোন করেছিলাম, তিনি ধরেন না। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির কাছে ফোন করেছি, তিনি বললেন মামলা নিতে পারব না।'

শাহাদাত বলেন, 'সেতুমন্ত্রী আমার ফোন ধরেন না। তাকে কাদের মির্জা তিন বছর আগে অনেক অপমান করেছেন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সারা বাংলাদেশে তার মান-সম্মান নষ্ট করেছেন। আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। তিনি মন্ত্রীকে কন্ট্রোলে রেখেছেন। মন্ত্রীকে হুমকি দিয়েছেন যে তার কথা না শুনলে লাইভে এসে তার নামে কুৎসা রটাবে।'

তিনি বলেন, 'আমরা পাঁচ ভাই। আমাদের ছোটভাইকে কাদের মির্জা মেরে ফেলেছেন। ইচ্ছা করেই মেরে ফেলেছেন। অথচ, তিনি সেতুমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বলেন, সেতুমন্ত্রী নাকি আমার ছোট ভাইকে মেরে ফেলেছেন। কোম্পানীগঞ্জে চোর, বাটপার ও রোহিঙ্গাদেরকে কাদের মির্জা নেতা বানিয়েছেন। কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগকে তিনি শেষ করে দিয়েছেন। প্রতিটা খাতে আব্দুল কাদের মির্জা চাঁদাবাজি করছেন। এই যে রাস্তার কাজ চলছে, সেখান থেকে তিনি ১৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন।'

শাহাদাত আরও বলেন, 'কোম্পানীগঞ্জে কিসের দলীয় প্রার্থী? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা দেশে কোনো দলীয় প্রার্থী নেই। আমি উৎসবমূখর পরিবেশে জনগণের অংশগ্রহণে ভোট চাই। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আকুল আবেদন, আপনি কোম্পানীগঞ্জকে বাঁচান। কোম্পানীগঞ্জের ভোটারদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করুন।'

এর আগে ২৪ মে এক নির্বাচনী প্রচারণা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহাদত বলেছিলেন, 'আমার মনে হয় এই পরিবারে জন্ম হওয়াটা ভুল ছিল।'

উপজেলা নির্বাচনে শাহাদাতের প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম শরীফ পিপুল। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। কাদের মির্জা পিপুলকে সমর্থন দিচ্ছেন।

গত ১৫ মে বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় ছোট ভাই শাহাদাত হোসেনকে 'কুলাঙ্গার' আখ্যা দিয়ে কাদের মির্জা বলেন, 'শাহাদাত আমার ভাই না।'

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কাদের মির্জার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English

People are my life force: PM

Prime Minister Sheikh Hasina today urged the Special Security Force (SSF) to ensure she remains connected with the people, emphasising their importance to her leadership

2h ago