ছয় সমন্বয়কের বিবৃতি: জোর করে বসিয়ে ভিডিও করা হয়, মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত আন্দোলন প্রত্যাহার করা সংক্রান্ত ভিডিও বার্তাটি তারা স্বেচ্ছায় দেননি। তাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়েছে। মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তারা।

বিবৃতিদাতা ছয় সমন্বয়ক হলেন—মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদার।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'মূলত আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় "নিরাপত্তার" নামে ছয় সমন্বয়ককে সাতদিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও আমাদেরকে আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল।'

বিবৃতিতে তারা বলেন, 'আমরা গুম, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম; আমরা আমাদের মত প্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু অসাংবিধানিক ও আইনবহির্ভূতভাবে আমাদেরকে ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা হয়। প্রথমে নিরাপত্তার কথা বললেও পরে আদালতের কথা বলা হয়। আদালতের আদেশ ছাড়া নাকি আমাদের ছাড়া যাবে না।

'যারা নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে তাদের হেফাজতে কেউই নিরাপদে থাকতে পারে না। সরকারের কাছে আমরা এই প্রহসনের নিরাপত্তা চাই না ৷ আমরা আমাদের ভাই বোনদের খুনের বিচার চাই।'

এতে আরও বলা হয়, 'আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়কের ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা স্বেচ্ছায় দেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারাদেশের সকল সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না।

'ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি।'

ছয় সমন্বয়ক বলছেন, 'অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৩০ জুলাই রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ডিবি অফিসে আটক অবস্থায় অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। পরবর্তীতে সে খবর জানামাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন শুরু করেন।

'অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয়। প্রায় ৩২ ঘন্টারও অধিক সময় অনশনের পর ডিবিপ্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে অনশন ভাঙা হয়। আমাদের পয়লা অগাস্ট দুপুর দেড়টায় পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গত সাতদিন ডিবি অফিসে আমাদের ও আমাদের পরিবারের সাথে নানা হয়রানি, নির্যাতন ও নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'

বিবৃতিদাতাদের ভাষ্য, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্র-নাগরিকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকার এখনো শিক্ষার্থীদের উপর দমননীতি অব্যাহত রেখেছে এবং সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাধা প্রদান করছে।

'ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটককৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে সরকারের মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ও দমন-পীড়নকে তোয়াক্কা না করে রাজপথে নেমে আসুন। শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না।'

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে প্রথমে তিনজনকে গত ২৬ জুলাই বিকেলে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে আনা হয়। তারা হলেন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের। তাদের মধ্যে নাহিদ ও আসিফ সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাকের তাদের সঙ্গে ছিলেন।

পরদিন সন্ধ্যায় সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে আসে ডিবি। এরপর রোববার ভোরে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তুলে আনা হয় নুসরাত তাবাসসুমকে। এর পর থেকে তারা মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন।

ডিবির দাবি, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Trump says not yet made decision on whether to attack Iran

Israel army says struck Iran centrifuge production, weapons manufacturing sites

1d ago