চট্টগ্রাম বন্দর

এনসিটি পরিচালনায় আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত

কমিটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) কর্তৃক চট্টগ্রাম বন্দরের ‘নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালসহ ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকমানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ’ প্রকল্পটি প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন্স অর পিপিপি প্রজেক্ট, ২০১৮ অনুযায়ী পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগ দিতে যাচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের এ বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

কমিটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) কর্তৃক চট্টগ্রাম বন্দরের 'নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালসহ ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকমানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ' প্রকল্পটি প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন্স অর পিপিপি প্রজেক্ট, ২০১৮ অনুযায়ী পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

অবশ্য এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড আলোচনা চালিয়ে আসছে বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

২০০৭ সালে ৫৬৬ কোটি টাকা খরচ করে ৫টি জেটি সম্বলিত এই টার্মিনালটি নির্মাণের পর অপারেটর নিয়োগের জটিলতায় ৮ বছর এটি পুরোপুরি চালু করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নির্মাণের পর অবশ্য এর ২টি জেটিতে দেশীয় বেসরকারি সংস্থা সাইফ পাওয়ার টেক-কে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে এডহক ভিত্তিতে ২০১৫ পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়।

পরে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি টেন্ডারের মাধ্যমে এনসিটির ৪টি জেটি পরিচালনার দায়িত্ব পায় সাইট পাওয়ার টেক ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু সরকার এখন পিপিপির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগ দিয়ে টার্মিনালটি পরিচালনা করতে চায়।

দুবাইয়ের ডিপিওয়ার্ল্ড প্রায় ৩ বছর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশে বন্দর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, কন্টেইনার টারমিনাল পরিচালনা সহ কয়েকটি খাতে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।

ওই বছরের জানুয়ারিতে ডিপি ওয়ার্ল্ড এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়, যাতে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

ডিপি ওয়ার্ল্ডের উপমহাদেশীয় ও সাব-সাহারা আফ্রিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিইও অ্যান্ড এমডি) রিজওয়ান সুমারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল গত বছরের আগস্টে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে চট্টগ্রাম বন্দর ও এর প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ করেন।

গত সপ্তাহে সুমার আবারো বাংলাদেশে আসেন এবং গত ১৯ মার্চ নৌ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সভা করেন। নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল সে সময় উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মো. শাহজাহান অবশ্য জানিয়েছেন যে ডিপিওয়ার্ড শুধু এনসিটি নয় প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল এবং সম্প্রতি নির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনারও আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

এনসিটি-তে আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের বন্দরের প্রকল্প প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব কিছু সম্পন্ন হতে অনেক সময় লাগবে।

প্রস্তাবটি এরপর পিপিপিতে যাবে এবং পিপিপি আন্তর্জাতিক ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার নিয়োগ করবে যেটি অপারেটর নিয়োগের ব্যাপারে একটি বিজনেস ও ফাইন্যান্সিয়াল মডেল দাঁড় করাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল) তৈরি করবে।

মো. শাহজাহান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজারের তৈরি করা বিজনেস মডেল এবং আরএফপির ভিত্তিতেই আমরা আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করবো।'

এনসিটি পরিচালনায় কেবল বিদেশি অপারেটরই নিয়োগ পাবে কিনা কিংবা কোন দেশি অপারেটর সুযোগ পাবে কিনা, তা জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান জানান—আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই আন্তর্জাতিকমানের হতে হবে।

তবে, কোনো দেশি প্রতিষ্ঠানের যদি অন্য দেশে বন্দর বা টার্মিনাল পরিচালনায় অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে তারাও এতে অংশ নিতে পারবে বলে তিনি জানান।

বর্তমানে কোনো দেশি প্রতিষ্ঠানের সেই অভিজ্ঞতা আছে কিনা জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, এখন হয়তো নেই কিন্তু শোনা যাচ্ছে কিছু দেশি প্রতিষ্ঠান এই ধরনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং এর মধ্যে যদি সে ধরনের কোনো যোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দেয় তবে তা যাচাই করা যাবে।

Comments