চসিকের এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পে অনিয়মের সত্যতা পেল দুদক
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৪৮ কোটি টাকার এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে 'অনিয়মের' অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এনামুল হকের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়।
অভিযানে দুদক ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলেও, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা দিতে পারেননি।
দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক নাজমুস সাদাত দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।'
'আমরা আরও তদন্তের জন্য কমিশনের অনুমতি চাইব। বিস্তারিত তদন্তের পর দুদক মামলার সিদ্ধান্ত নেবে,' বলেন তিনি।
দুদক সূত্র জানায়, এনফোর্সমেন্ট টিম চসিকের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক্যাল) ঝুলন কুমার দাসকে প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে বললে, তিনি তা দিতে ব্যর্থ হন।
এমনকি প্রকল্পের দ্বিতীয় দফা দরপত্রের মাধ্যমে নিযুক্ত ঠিকাদার ছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য কোম্পানির নথিও চসিকের কাছে সংরক্ষিত নেই বলে জানায় দুদক।
কেন অন্য কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো, তার কোনো রেকর্ড চসিকের কাছে নেই বলে জানতে পেরেছে দুদকের তদন্ত দল।
এছাড়া, কেন প্রথম দরপত্র বাতিল করা হলো, এ প্রশ্নের উত্তর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট চসিক প্রকৌশলীর জানা নেই।
জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে চসিক সূত্রে জানা গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস লিমিটেড ২০২০ সালের ১৪ মে ৪টি প্যাকেজে শহরের ৭৫ কিলোমিটার সড়কে এলইডি লাইট স্থাপনের জন্য ৪১ দশমিক ৮৩ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজের আদেশ পায়।
পরে ব্যয় সংশোধন করে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা করা হয়। প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন হয় একই বছরের ৯ জুন। কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।
দুদক কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৯ সালে প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তখন পাঁচটি ঠিকাদারি কোম্পানি টেন্ডারে অংশ নেয়। কিন্তু সবাইকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
২০২০ সালে আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এবার ৬টি কোম্পানি অংশ নিলেও, ঠিকাদার কোম্পানি এইচটিএমএস লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রথম ধাপের দরপত্রে অংশ নেওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হলো, সে বিষয়ে কোনো নথি দেখাতে পারেননি চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী।'
তিনি আরও বলেন, 'দ্বিতীয় ধাপের দরপত্রে যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়, তাদের কাগজপত্রই শুধু চসিকের কাছে আছে। যাদের কার্যাদেশ দেওয়া হলো না, তাদের কোনো কাগজপত্র চসিকের কাছে নেই।'
'কেন কোম্পানিগুলোকে বাদ দেওয়া হলো, তা যাচাই করা উচিত,' বলেন তিনি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাসকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
Comments