পুলিশকে পিটিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

আনোয়ারা উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কজী মোজাম্মেলের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেন।
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৩
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পুলিশের ওপর হামলা করে এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা এ সময় পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে।

পুলিশ জানিয়েছে, আনোয়ারা উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কজী মোজাম্মেলের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেন।

হামলায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি) কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির উদ্দিনের ডান হাতের হাড় ফেটে গেছে। এ ছাড়াও আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদসহ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রায় ১০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ। এর এক পর্যায়ে আবার সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের একটি গাড়ি আটকে ভাঙচুর করা হয়।

গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চাতরি-চৌমুহনী এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। হামলায় জড়িতরা অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের আনোয়ারা সেন্টার এলাকায় বাজেটকে স্বাগত জানানোর পালটাপালটি কর্মসূচি ঘিরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

ওই ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামিদের ধরতে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা থানা পুলিশ শনিবার রাতে যৌথভাবে অভিযান শুরু করে।

ওসি জহির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন 'সেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মোজাম্মেলকে আটক করতে রাত ১১টার পর আনোয়ারায় টানেলের প্রবেশমুখে ভোজনবাড়ি নামে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে যায় পুলিশ। সেখানে আগে থেকে মোজাম্মেলসহ কয়েকজন নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন।'

'সেই খবর পেয়ে অভিযানে যায় পুলিশ,' বলেন ওসি।

সিএমপির বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা সাংবাদিকদের বলেন পুলিশ মামলার আসামিকে আটক করতে গেলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বাধা দেন। এ সময় রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বেরিয়ে আসেন। তিনিসহ নেতাকর্মীরা মিলে আসামি মোজাম্মেলকে ছিনিয়ে নেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার কিছুক্ষণ এর মধ্যে কয়েকশ নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হন। তার উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের ঘিরে ধরে গাছ দিয়ে আঘাত করে এবং এবং একপর্যায়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পাঁচ-ছয় রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।

ডিসি শাকিলা আরও জানান, হামলায় আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদ ও কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে ওসি জহিরের হাতে ও শরীরের কয়েকটি জায়গায় গুরুতর জখম হয়েছে।

ওসি জহির বলেন 'সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখেছি, উনি (চেয়ারম্যান) ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন। এসেই তিনি আসামিকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেন।'

'আমাকে এবং আনোয়ারার ওসি স্যারকে মেডিকেলে নেওয়ার সময় শুনি আবার হামলা হয়। চৌমুহনী বাজার থেকে স্পেশাল রিজার্ভ ফোর্সের একটি গাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে সেটি ভাঙচুর করা হয়। সেখানে আরও চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন,' বলেন ওসি জহির হোসেন।

কাজী মোজাম্মেলের বক্তব্য জানতে তার নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের তৃতীয় দফায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য। প্রথম দুবার তিনি ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সংরক্ষিত আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানের এলাকাও আনোয়ারা-কর্ণফুলী। তিনি এবার অর্থপ্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।'

Comments