ভালোবাসা প্রকাশের অভিনব সব উপায়
'ভালোবাসা' একটি শাশ্বত মানবিক অনুভূতি। লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট, ভালোবাসা নিয়ে তৈরি হয়েছে কালজয়ী গল্প আর কথকতা। ভালোবাসা শাশ্বত হলেও পৃথিবী জুড়ে ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গী ভিন্ন ভিন্ন।
কোনো সংস্কৃতিতে যে কথা বা আচরণকে ভালোবাসার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ বলে ধরা হয়, আরেক সংস্কৃতিতে এটি হতে পারে 'অপমানজনক' বা বিরক্তিকর। বিশ্বজুড়ে মনের ভাব প্রকাশের বিচিত্র পন্থা নিয়েই আজকের লেখা।
রঙিন পুঁতির প্রেমপত্র
'ভালো আছি ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো।'
মনের কথা প্রকাশে চিঠি লেখা বা প্রেমপত্র নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে চিঠি আদান প্রদান করে মানুষ প্রিয়জনের কাছে ভালোবাসা প্রকাশ করে আসছে। আফ্রিকার জুলু সংস্কৃতির মেয়েরা রঙিন পুঁতি দিয়ে তৈরি প্রেমপত্র ব্যবহার করে প্রিয় মানুষের প্রতি তাদের অনুরাগ দেখায়। পুঁতির রঙ তাদের অনুভূতির প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন লাল রঙ মানে রাগ বা অভিমান এবং হলুদ আগ্রহ দেখানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
শূকর উপহার
ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে আপনি যদি আপনার বন্ধু বা বান্ধবীকে একটি শূকর-আকৃতির মূর্তি উপহার দেন, তাহলে বন্ধু বা বান্ধবীটি নিশ্চয়ই হতভম্ব হবে। ক্ষেত্রবিশেষে বিরক্তও হতে পারে। কিন্তু জার্মানিতে বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। কারণ সেখানে সোয়াইন-থিমযুক্ত উপহারের অর্থ সৌভাগ্য আনার পাশাপাশি আপনার সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণের প্রতীক। চকলেট ও কেক থেকে শুরু করে যেকোনো উপহার সেখানে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হবে যতক্ষণ না এতে একটি শূকরের ছবি বা আকৃতি থাকে।
তিমির দাঁত উপহার
ভালোবাসা সফল হওয়ার পথে অধিকাংশ সময় বাঁধা হয় মেয়ের বাবা। ফিজিতে আপনি যদি আপনার হবু শ্বশুরকে জয় করতে চান, তাহলে তাকে একটি স্পার্ম তিমির (এই ধরনের তিমির দাঁত সবচেয়ে বড় হয়) দাঁত উপহার দিতে পারেন। যাকে ফিজিতে 'ট্যাবুয়া' ডাকা হয়। অন্তত, ফিজিতে বিয়ের আগে উদ্বিগ্ন বাবাদের কাছে পাত্র ট্যাবুয়া উপহার দেন তার মন জয় করার উদ্দেশ্যে। তিমিদের দাঁত ঐতিহ্যগতভাবে যুদ্ধ বা শান্তির জন্য উপহার হিসেবে দেওয়া হতো। এজন্য এখনো ফিজিতে এই প্রথা চালু আছে।
পুরুষের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা
নাইজেরিয়ার 'ওদাবে ফুলা' উপজাতির পুরুষেরা তাদের সঙ্গীকে আকৃষ্ট করার জন্য ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর মুখে কাদামাটি মেখে দাঁড়িয়ে থাকে। এটি হলো সেই উপজাতির জন্য একটি বার্ষিক বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতা। যাকে স্থানীয় ভাষায় 'গেরেওল' ডাকা হয়। এটি একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মতোই। যেখানে বিবাহযোগ্য পুরুষেরা নারীদের মনজয়লাভ করার জন্য চারপাশে ঘুরে বেড়ায়, গান গায় এবং ধর্মীয় নৃত্য পরিবেশন করে। তাদের নাচের উদ্দেশ্য হল প্রেমিকাকে আকর্ষণ করা, এমনকি তা অন্য কারো স্ত্রী হলেও। এই আয়োজনটি অনেকটা প্রাচীন যুগের 'স্বয়ংবর সভার'। যেখানে নারীরা অনেক পুরুষের মাঝে একজনকে নিজের স্বামী হিসেবে বাছাই করতে পারতেন।
লাঞ্চবক্স
ইরফান খান অভিনীত বলিউডের 'লাঞ্চবক্স' সিনেমার মতোই মিষ্টি এই অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমটি। জাপানে ভালোবাসা প্রকাশের দিকে এখনো রক্ষণশীল। সেখানে সবার সামনে স্নেহ প্রদর্শন ভালোভাবে দেখা হয় না। তাই সেখানে ভালোবাসার কথা না বলেও নারীদের জন্য তাদের প্রিয়জনের প্রতি আবেগ প্রকাশের অন্যতম পন্থা বিশাল প্যাকড লাঞ্চ তৈরি করা। যাকে জাপানি ভাষায় 'বেন্টো' বলা হয়। বেন্টো বা লাঞ্চবক্স যত বেশি সুন্দর আর বড় হবে, অন্য পুরুষদের ঈর্ষান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এই অভিনব উপায়ে নারীরা তার সঙ্গীর মন জয় করে থাকেন।
স্ত্রীকে বহন করার প্রতিযোগিতা
প্রতি বছর জুলাই মাসে ফিনল্যান্ডের একটি শহরে স্ত্রীকে বহন করার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতা দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে ভিড় জমায় সেখানে। আয়োজনটি অনেকটা বলিউডের 'দাম লাগা কে হায়সা' সিনেমার মতোই। স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে অংশগ্রহণকারী স্বামীরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে দৌড়ায়। যিনি সব বাধা পেরিয়ে আগে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় সঙ্গীর শারীরিক ওজনের সমান বিয়ার।
বরফের ওপর খালি পায়ে হাঁটা
স্লোভেনিয়ায়, প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি খালি পায়ে হিমায়িত পথে হেঁটে চলা একেবারে স্বাভাবিক বিষয়। স্লোভেনীয়রা বিশ্বাস করেন, মাঠের পাখিরা তাদের প্রিয়জনকে প্রস্তাব দেয় এবং এই দিনে বিয়ে করে। স্লোভেনিয়ানদের অবশ্যই পাখিদের অনুষ্ঠান দেখার জন্য শীতের মাঠের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হবে এমনটাই নিয়ম।
সিঙ্গেল ডে
বিশ্বে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস পালনের মতো দক্ষিণ কোরিয়ায় সিঙ্গেলদের জন্যও বছরের একটি বিশেষ দিন রয়েছে। যেদিন তারা যে কাউকে আলিঙ্গন করতে পারে, ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে। যারা ভালোবাসা দিবসে কোনো উপহার পান না তারা ১৪ এপ্রিলকে 'বার্ষিক কালো দিবস' হিসেবে পালন করেন। সেদিন সিঙ্গেলরা কালো পোশাক পরে অন্যান্য সিঙ্গেল বন্ধুদের নিয়ে ব্ল্যাক বিন পেস্ট নুডলস খায়।
তথ্যসূত্র: ওয়ানডারলাস্ট, ডেইলি টাইটান
Comments