আল শিফা হাসপাতাল থেকে শিশুদের বের করে আনতে চায় ইসরায়েল
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা থেকে শিশুদের বের করে আনতে প্রস্তুত।
এর আগে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালে জ্বালানি সংকট ও অক্সিজেনের অভাবে ২ নবজাতক মারা গেছে এবং বাকিদের জীবনও ঝুঁকিতে আছে।
আজ রোববার বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আল শিফা হাসপাতালের আশেপাশের এলাকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
বিশ্লেষকদের দাবি, এ অঞ্চলের মানবিক সংকট আরও বেড়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাস হামলা চালালে ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। আরও ২০০ জনের মতো ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে হামাস। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় প্রতিশোধমূলক নির্বিচার হামলা শুরু করে, যা প্রায় ৩৫ দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিমানবাহিনীর সঙ্গে এ হামলায় যোগ দিয়েছে ইসরায়েলের স্থল বাহিনী।
যুদ্ধের শুরুতে নিহত ও জিম্মির সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ৪০০ ও ২৪০ বলে জানানো হলেও সর্বশেষ তথ্যে এই সংখ্যাটি সংশোধন করে কমিয়ে এনেছে ইসরায়েল।
শুক্রবার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, বিমান ও কামান হামলায় সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের ৪০ শতাংশই শিশু।
গাজার বাসিন্দারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গাজা শহরে (গাজা সিটি) ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে হামাসের যোদ্ধাদের রাতভর সংঘর্ষ চলেছে। এখানেই গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফার অবস্থান।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি আশরাফ আল-কিদরা জানান, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ আছে। এ কারণে ইনকিউবেটরে রাখা দুই নবজাতক মারা গেছে। সেখানে মোট ৪৫টি শিশু চিকিৎসাধীন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ইসরায়েলের কামানের গোলার আঘাতে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে এক রোগী নিহত হন। ইসরায়েলি স্নাইপাররা অন্যান্য ভবনের ছাদ থেকে হাসপাতালের দিকে বিভিন্ন সময়ে গুলি ছুঁড়ছে। যার ফলে কেউ হাসপাতালে ঢুকতে বা সেখান থেকে বের হতে পারছে না।
হাসপাতালে আটকে পড়াদের নিরাপত্তা নিয়ে 'গভীর উদ্বেগ' জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রধান সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানান, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আল শিফা হাসপাতাল থেকে শিশুদের বের করে আনতে সহায়তা করবে। হাসপাতালের কর্মীদের অনুরোধে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
হাসপাতালটির পরিচালক মুহাম্মাদ আবু সালমিয়া আল জাজিরা টিভিকে বলেন, রোগীদের সুরক্ষিত রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, 'আমরা রেড ক্রসকে জানিয়েছি, আমাদের এখানে পানি, অক্সিজেন, জ্বালানি—বস্তুত সবকিছুই ফুরিয়ে গেছে।'
'বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা না গেলে প্রি ম্যাচিউর শিশু, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের রোগী, এমন কী যারা আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন, তারা কেউই বেঁচে থাকতে পারবেন না। যদি অধিগ্রহণকারীদের সেনাবাহিনী আহত মানুষকে বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়, যা গাজা উপত্যকার চেয়ে বেশি নিরাপদ, সে ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই', যোগ করেন তিনি।
ইসরায়েল এর আগে জানিয়েছে ডাক্তার, রোগী ও হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া হাজারো ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে বের হয়ে যেতে হবে, যাতে তারা হাসপাতালের মাটির নিচে ও আশেপাশের এলাকায় লুকিয়ে থাকা হামাসের সদস্যদের নির্মূল করতে পারে।
ইসরায়েলের দাবি, বেসামরিক মানুষকে মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য হামাস তাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক হাসপাতাল ও অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনার নিচে তৈরি করেছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস।
চিকিৎসাকর্মীরা এর আগে জানিয়েছে, রোগীদের সরাতে গেলে তারা মারা যেতে পারেন। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন হামলার মধ্যে রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার কাজটি অত্যন্ত বিপদজনক।
ইসরায়েলের কৃষিমন্ত্রী আভি ডিখটার এভাবে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাকে 'গাজার নাকবা' বলে অভিহিত করেন। তিনি এ বিষয়টিকে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনিদের গণহারে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেন।
'গাজা উপত্যকার ভেতরে এখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যেভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে চাইছে, তা কার্যকর করা অসম্ভব। আমি জানি না এটা কীভাবে শেষ হবে', যোগ করেন তিনি।
আল শিফা হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জন আহমেদ আল-মোখাল্লালাতি রয়টার্সকে বলেন, '২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে টানা বোমাবর্ষণ চলছে। হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ও হাসপাতালের কর্মীদের বেশিরভাগই এ জায়গা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে ৫০০ রোগী এখনো সেখানে আছেন।'
'এটা পুরোপুরি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের পরিবেশ আতঙ্কজনক', যোগ করেন তিনি।
হামাসের সামরিক সংগঠন আল-কুদস ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা গাজার আল শিফা হাসপাতাল, আল নাসর মহল্লা ও আল শাতি শরণার্থী শিবিরের আশেপাশের এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে আছে।
আল নাসর মহল্লাতেও বেশ কয়েকটি বড় হাসপাতাল আছে।
Comments