ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার গ্যাস ট্রানজিট বন্ধ করেছে ইউক্রেন

ইউক্রেন, রাশিয়া, রাশিয়ার গ্যাস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভলোদিমির জেলেনস্কি,
সোভিয়েত আমলের পাইপলাইনটি রাশিয়ার সুদজা গ্রামের কাছ দিয়ে ইউক্রেনে প্রবেশ করেছে। রয়টার্স ফাইল ফটো

ইউক্রেনের গ্যাস ট্রানজিট অপারেটর নাফটোগাজ ও রাশিয়ার গ্যাজপ্রমের মধ্যে পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে ইউক্রেন। আজ বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, তার দেশ রাশিয়াকে 'আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে অতিরিক্ত বিলিয়ন ডলার আয় করতে' দেবে না।

এজন্য ইইউকে প্রস্তুতি নিতে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

পরে ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছিল, মহাদেশটির গ্যাস ব্যবস্থা 'স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল' অবস্থায় আছে। তাই ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর্যাপ্ত সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

তবে রাশিয়া এখনো কৃষ্ণ সাগর দিয়ে তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে হাঙ্গেরির পাশাপাশি তুরস্ক ও সার্বিয়ায় গ্যাস পাঠাতে পারবে।

ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে রুশ গ্যাসের যুগের আপাতত অবসান হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় স্লোভাকিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, ভিন্ন পরিকল্পনা ও বিকল্প সরবরাহের কারণে এর প্রভাব মারাত্মক হবে না।

অবশ্য বিবিসি বলছে, রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় সমগ্র ইউরোপে বড় ধরনের কৌশলগত প্রভাব পড়বে।

রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারালেও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইইউ দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এর আগে, ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছিল ইইউ। তবে পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি সদস্য দেশ রাশিয়ার সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে, গ্যাস রপ্তানি করে রাশিয়া বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ইউরো (পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার বা চার দশমিক দুই বিলিয়ন পাউন্ড) আয় করেছে।

ইইউয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাস আমদানির ১০ শতাংশের কম ছিল রাশিয়ান গ্যাস, যা ২০২১ সালে ছিল ৪০ শতাংশ।

তবে স্লোভাকিয়া ও অস্ট্রিয়াসহ ইইউভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি অব্যাহত রেখেছিল।

অস্ট্রিয়ার জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, গ্যাসের অন্যান্য উৎস ও পর্যাপ্ত মজুত থাকায় তারা সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার পূর্বাভাস দেয়নি।

ইউক্রেনের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে স্লোভাকিয়ার ওপর প্রভাব ফেলেছে। কারণ দেশটি ইইউতে রাশিয়ার গ্যাসের প্রধান প্রবেশদ্বার এবং অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও ইতালিতে গ্যাস পাইপ ব্যবহার করে ট্রানজিট ফি আয় করে।

গত শুক্রবার স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো ইউক্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন। রবার্ট ফিকো সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মস্কো সফর করেন।

রবার্ট ফিকোর মস্কো সফরের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে 'যুদ্ধে অর্থায়ন ও ইউক্রেনকে দুর্বল করতে' সহায়তা করতে চাচ্ছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, 'ফিকো ইউক্রেনীয়দের জন্য আরও দুর্ভোগ ডেকে আনতে রাশিয়ার সঙ্গে স্লোভাকিয়াকে জড়াচ্ছেন।'

এদিকে পোল্যান্ড কিয়েভকে বৈদ্যুতিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, স্লোভাকিয়া বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করলে তারা বিদ্যুৎ সহায়তা দেবে। বিদ্যুৎ সমস্যা ইউক্রেনের জন্য বড় একটি সমস্যা, কারণ দেশটির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রাশিয়ার নিয়মিত আক্রমণের শিকার হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ না হলেও মলদোভা এই ট্রানজিট চুক্তি শেষ হওয়ায় সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ দেশটির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল।

মলদোভার জ্বালানিমন্ত্রী কনস্ট্যান্টিন বোরোসান বলেছেন, সরকার স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে নাগরিকদের মানসিকভাবে শক্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মলদোভায় জ্বালানি খাতে ৬০ দিনের জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।

রাশিয়া ১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে আসছিল।

ইইউ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার পর কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) পাশাপাশি নরওয়ে থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজে পেয়েছে মহাদেশটি।

ডিসেম্বরে ইউরোপীয় কমিশন একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইইউ সদস্য দেশগুলোতে গ্যাস ট্রানজিট ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আপৎকালীন পরিকল্পনার আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ট্রান্স-বলকান রুট থেকে গ্রিস, তুর্কি ও রোমানিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে পাইপের মাধ্যমে নরওয়ের গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এছাড়া জার্মানির মধ্য দিয়ে অন্যান্য সরবরাহ মধ্য ইউরোপে পৌঁছাবে।

Comments

The Daily Star  | English
govt employees punishment rule

Govt employees can now be punished for infractions within 14 working days

Law ministry issues ordinance amending the Public Service Act, 2018

2h ago