‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল হামলা চালালে হিতে-বিপরীত হতে পারে’

ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনা। ফাইল ছবি: ডয়চে ভেলে
ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনা। ফাইল ছবি: ডয়চে ভেলে

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলার আশংকায় ইরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 

গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ।

পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের পরিদর্শকরা রোববার পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। 

এমন সময় কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয় যখন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করছিল।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতার রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হওয়ার 'দ্বারপ্রান্তে' রয়েছে এবং ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে তারা পারমাণবিক বোমা নির্মাণ করতে পারে। আশাতীত দ্রুতগতিতে ইরানের ইউরেনিয়াম পরিশোধন কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ইরান পারমাণবিক বোমা নির্মাণ করতে চায়, এমন কোনো বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলও আপাতত ইরানের পরমাণু-কেন্দ্রে হামলা চালানোর কথা ভাবছে না।

তা সত্ত্বেও, রাফায়েল গ্রোসি জানান, ইরানে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের 'ইরান সরকার জানায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে পরমাণু কেন্দ্রের পরিদর্শন স্থগিত থাকবে'। গ্রসি উল্লেখ করেন, প্রায় প্রতিদিনই এসব কেন্দ্রে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের উপস্থিতি বজায় থাকে।

তিনি জানান, সোমবার কেন্দ্রগুলো আবার খুলে দেওয়া হলেও মঙ্গলবারের আগে পরিদর্শকরা সেখানে ফিরবেন না।

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি ভেস্তে গেলেও আগের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কিছু বিধিনিষেধ শিথিলের বিনিময়ে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজর রাখতে দেওয়ার বন্দোবস্ত এখনো কার্যকর রয়েছে। মূলত ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ না করে, সেজন্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতি

ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শন করছেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানী। ফাইল ছবি: এএফপি (২০১৯)

এ বছর পরিদর্শকরা দেখতে পেয়েছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ নিউক্লিয়ার ফুয়েল উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং পরিশোধনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পেয়েছে, যার ফলে 'ওয়েপনস গ্রেড' ইউরেনিয়াম উৎপাদন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

পরিদর্শকরা আরও জানান, তারা আরও দ্রুত ইউরেনিয়াম পরিশোধনে সক্ষম নতুন সরঞ্জাম ও উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

তবে ইরানের পরমাণু সংস্থা জানিয়েছে, তারা অন্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে আসা পারমাণবিক হামলা প্রতিহত করার সক্ষমতা অর্জনে কাজ করছে।

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া

ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনার ভেতরের চিত্র। ফাইল ছবি: এএফপি
ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনার ভেতরের চিত্র। ফাইল ছবি: এএফপি

আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের ননপ্রলিফারেশন নীতি সংক্রান্ত পরিচালক কেলসি ড্যাভেনপোর্ট জানান, 'ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের দ্বারপ্রান্তে; তারা এখন খুব দ্রুত পারমাণবিক বোমা নির্মাণ করতে সক্ষম।' 

তিনি সতর্ক করেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালে হিতে-বিপরীত হতে পারে।

তিনি বলেন, 'ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে হামলা চালানোর বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আসাই উচিত নয়। ড্রোন ও মিসাইল হামলার জবাবে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো একটি বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ হবে। এতে আরও বড় আকারে আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পোড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

'ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বড় আকারে হামলা চালালে তেহরান এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে যে ভবিষ্যতে এরকম আরও হামলা আসলে তা ঠেকাতে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ অত্যাবশ্যক', যোগ করেন তিনি।

ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি

ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনা। ফাইল ছবি: এএফপি
ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনা। ফাইল ছবি: এএফপি

ইরানের কর্মকর্তারা সবসময় জানিয়ে এসেছেন, বেসামরিক চাহিদা মেটাতেই তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

তবে ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালালে তারা 'ভয়াবহ' ও 'বেদনাদায়ক' জবাব দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে।

ইরানের সংসদীয় জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির মুখপাত্র আবোলফজল আমোই বলেন, 'আগে ব্যবহার হয়নি এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে আমরা প্রস্তুত এবং সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের কৌশল ঠিক করে রাখা আছে। জায়োনিস্টদের (ইসরায়েল) সতর্ক থাকা উচিত।'

ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকারের উপদেষ্টা মাদহি মোহাম্মাদি বলেন, 'মিসাইল কর্মসূচির পাশাপাশি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিও রয়েছে।'

চাপের মুখে নেতানিয়াহু

লিকুদ পার্টির আইনপ্রণেতা তালি গোতলিভ। ছবি: এক্স থেকে সংগৃহীত
লিকুদ পার্টির আইনপ্রণেতা তালি গোতলিভ। ছবি: এক্স থেকে সংগৃহীত

নিজ দলের কট্টরপন্থীদের কাছ থেকে চাপের মুখে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। লিকুদ পার্টির কট্টর ডানপন্থীরা নেতানিয়াহুকে অনুরোধ করেছেন ইরানের বিরুদ্ধে 'সর্বাত্মক' হামলা চালাতে।

লিকুদ পার্টির আইনপ্রণেতা তালি গোতলিভ বলেন, 'এই সরকার যদি বাইডেনের দাবি মেনে নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে ইরানী হুমকিকে চিরতরে ধ্বংস করার এই সুবর্ণ সুযোগ না নেয়—সে ক্ষেত্রে আমার মত হল, এই সরকারের ওপর আস্থা রাখার কোনো মানে হয় না।'

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট ও দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও নেতানিয়াহুর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গ্যান্তজ, উভয়ই ইরানকে জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্য্যশীল থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago