গণতন্ত্র সম্মেলনের উদ্বোধন করলেন বাইডেন

বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখা হচ্ছে এমন ১টি চ্যালেঞ্জ, যা আমাদের যুগকে সংজ্ঞায়িত করে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখা হচ্ছে এমন ১টি চ্যালেঞ্জ, যা আমাদের যুগকে সংজ্ঞায়িত করে। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখা হচ্ছে এমন ১টি চ্যালেঞ্জ, যা আমাদের যুগকে সংজ্ঞায়িত করে। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার মেয়াদে দ্বিতীয় গণতন্ত্র সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন। তিনি একইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও একে সমুন্নত রাখার বিভিন্ন প্রকল্পে ৬৯০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের অঙ্গীকার করেছেন।

কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বুধবার শুরু হওয়া এ সম্মেলনের কিছু অংশগ্রহণকারী দেশে গণতন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এসব দেশের মাঝে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ভারত ও ইসরায়েল।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখা হচ্ছে এমন ১টি চ্যালেঞ্জ, যা আমাদের যুগকে সংজ্ঞায়িত করে।

'আজ আমরা গর্বে সঙ্গে বলতে পারি যে সারা বিশ্বের গণতন্ত্রগুলো আরও বলিষ্ঠ হচ্ছে, দুর্বল নয়। বিশ্বের একনায়কতন্ত্রগুলো দুর্বল হচ্ছে, বলিষ্ঠ নয়', যোগ করেন তিনি।

সমালোচকরা এই সম্মেলনের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বেশ কিছু একনায়কতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করেন।

সমালোচকরা আরও জানান, ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতে বাইডেন প্রশাসন মার্কিন বৈদেশিক নীতিমালার কেন্দ্রে মানবাধিকারকে স্থাপন করার কথা বললেও তারা পূর্বসূরির 'মার্কিন স্বার্থকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে' রাখার প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে।

এ সম্মেলনে বেশ কিছু সশরীরে বৈঠক ও ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। সহ-আয়োজক হিসেবে আছে কোস্টারিকা, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাম্বিয়া।

সম্মেলনে তাইওয়ান সহ ১২০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাইডেন প্রশাসন ন্যাটো মিত্র তুরস্ক ও হাঙ্গেরিকে আমন্ত্রণ জানায়নি।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কার্বি বুধবার বলেন, 'আমরা গণতান্ত্রিক সংস্থা, মানবাধিকার, আইনের শাসন, এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমর্থক জানানোর প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এ বিষয়গুলোকে মাথায় রাখা রেখেই দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে'। 

নিজ নিজ দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এ সম্মেলনের সঙ্গে জড়িত আছেন এমন ১ জন জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা মঙ্গলবার জানান, এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল 'গণতান্ত্রিক সহনশীলতাকে বলিষ্ঠ করা, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর প্রচারণা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া'।

বাইডেন বুধবার বলেন, তার অন্যতম প্রাধান্যের বিষয় হবে প্রযুক্তিকে গণতান্ত্রিক শাসনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে, অবমাননার জন্য নয়।

বাইডেন গত সপ্তাহে সরকারী সংস্থায় বাণিজ্যিক আড়িপাতা সফটওয়্যারের ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, 'মার্কিন করদাতাদের ডলার দিয়ে সেসব প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন জানানো হবে না, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তা করতে পণ্য সরবরাহ করে'।

বুধবার বাইডেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার 'হিংস্র ও আগ্রাসী যুদ্ধের' বিরুদ্ধে 'নজিরবিহীন একাত্মতা' দেখানোর জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর প্রশংসা করেন।

চীন এই সম্মেলনের সমালোচনা করে ওয়াশিংটনকে গণতন্ত্রের প্রচারণার অজুহাতে অন্যান্য দেশের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়ে" নাক না গলানোর আহ্বান জানায়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, 'নিজেদের দেশে অসংখ্য সমস্যা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আরও একটি "গণতন্ত্র সম্মেলনের" আয়োজন করেছে, যেটি এমন একটি অনুষ্ঠান, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তাদেরকে আলাদা করা হয়েছে, যা সমগ্র বিশ্বে বিভক্তি সৃষ্টি করছে'।

এবারের সম্মেলনে দাওয়াত পেলেও যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। সমালোচকদের মতে, 'সবসময়ের মিত্র' চীনকে অসন্তুষ্ট না করতে পাকিস্তানের এই উদ্যোগ।

উল্লেখ্য, চীনকে এবারের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। টানা ২ বছরের মতো বাংলাদেশও এ সম্মেলনে দাওয়াত পায়নি।

Comments