রামু রাবার বাগানের ৮৭০০ চারা কেটে দিয়েছে ‘ভূমিদস্যুরা’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের প্রথম রাবার বাগান কক্সবাজার জেলার রামু রাবার বাগান। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থার মালিকানাধীন এই রাবার বাগানটি আয়তনের দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। দেশের সবচেয়ে বড় রাবার বাগানটি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে অবস্থিত। ১৯৬০ সালে গড়ে তোলা ঐতিহ্যবাহী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত রামু রাবার বাগানের জমি একশ্রেণীর ভূমিদস্যু নানা কৌশলে দখল করে নিচ্ছে।

রামু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাতের অন্ধকারে গত কয়েকদিন ধরে দখলবাজ চক্রটি বাগানে ৩৫ একর জমিতে সম্প্রতি সৃজিত ৮ হাজার ৭০০টি রাবার গাছের চারা কেটে ফেলেছে। এতে বাগানের ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।'

ছবি: সংগৃহীত

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগানে সৃজিত চারা গাছ কেটে ফেলার খবর পেয়ে গতকাল রোববার ঘটনাস্থলে যান রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা। এর আগের দিন শনিবার দুপুরে ও ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন যান রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন, পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী ও রাবার বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

ছবি: সংগৃহীত

রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় বলেন, 'সম্প্রতি বাগানের ৫০ একর জমিতে রাবার গাছের চারা রোপণের কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে ৩৫ একর জমিতে রাবার চারা রোপণের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে। বাগানের মিতার ছড়া মৌজায় একটি ভূমিদস্যু চক্র জমি জবর-দখলের উদ্দেশ্য প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে ১০ থেকে ১২টি ঘর তৈরির কাজ শুরু করে। চক্রটি বাগানের অভ্যন্তরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করার উদ্দেশ্যে চলাচলের রাস্তাটিও কেটে দিয়েছি।'

তিনি জানান, সর্বশেষ ভূমিদস্যুরা বাগানে চারা রোপণে জড়িত শ্রমিকদের মারধর ও জীবননাশের হুমকি দিলে বাগান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি রামু উপজেলা প্রশাসন ও থানাকে অবহিত করে। গত ২ দিন বাগানের দখল করে নেওয়া ওই স্থানে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা, ও ওসি আনোয়ারুল হোসাইন বাগানের আওতাধীন পাহাড়ি জমি দখলের চেষ্টা, বিপুল পরিমাণ চারা গাছ কেটে ফেলা এবং চলাচলের রাস্তা কেটে বিচ্ছিন্ন করার সত্যতা পান। গত শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জবর-দখলকারী চক্রের সদস্যরা সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাক-বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে।

ছবি: সংগৃহীত

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, 'গত শনিবার বাগানের জমি জবর-দখলের যারা চেষ্টা চালিয়ে ছিল তাদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে সমাধানের কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু রোববার ভোরে জবর-দখলকারীরা তা অমান্য করে আবারো বাগানে রোপণ করা বিপুল পরিমাণ রাবার গাছের চারা কেটে দিয়েছে। এমনকি বাগান জবর-দখলের উদ্দেশ্যে নতুন আরও ১০ থেকে ১২টি প্লাস্টিকের ঘর তৈরি করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের যারা ক্ষতিসাধন করেছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। জবর দখলকারীদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বাগান সরকারি সম্পত্তি,  রামু তথা দেশের ঐতিহ্য  ও এখানকার গর্ব। এ বাগানের সম্পদ ও সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।'

রামু থানার ওসি আনোয়ারুল হোসাইন বলেন, 'সরকারি সম্পদ বিনষ্ট ও সরকারি কাজে বাঁধা দেয়া হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ঘটনায় রামু থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।' 

বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় বলেন, 'বাগানের জমি জবর দখল, রাস্তা কেটে ফেলা এবং কয়েক হাজার চারা গাছ কেটে ফেলার অভিযোগে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গতকাল রোববার রাতে রামু থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।'

রাবার বাগানের মোট জমির পরিমাণ ২ হাজার ৬৮২ একর। বর্তমানে রাবার গাছ রয়েছে ৩ লাখ। তারমধ্যে প্রায় দেড় লাখ গাছ থেকে কাচা রাবার সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বাগানের প্রায় ৫৩৬ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে বলে জানান রাবার বাগানটির ওই কর্মকর্তা।

১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রামু রাবার বাগান পরিদর্শন করেছিলেন। ওই সময় রাবার বাগান বিশ্রামাগারে তিনি যে চেয়ারটিতে বসেছিলেন তা বিশেষ ব্যবস্থায় সেখানে সংরক্ষিত আছে। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন উপজেলা প্রশাসন একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ওই চেয়ারটি শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণের কাছে প্রদর্শন করেছিল।  

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

IMF to continue talks with Bangladesh for near-term agreement

The global lender said such an agreement would pave the way for completing the combined third and fourth reviews

1h ago