এক উপজেলার ২০০ গ্রাম প্লাবিত

হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব রাজু মিয়ার সংসার চলে বাজারে বাজারে মাছ বিক্রির আয়ে। নিজের চাষের যে জমি আছে তা থেকে যে ধান হয় তাতে বছরের কয়েক মাস যায়। হাকালুকি পারের তালিমপুর ইউনিয়নের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের রাজু মিয়াদের বন্যার সঙ্গে লড়াই বংশপরম্পরায়। তবে এবারের বন্যার লড়াইটা তাদের কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

গত শনিবার পরিবার নিয়ে রাজু আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির কাছের হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। কেবল রাজু নন, তালিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বহু মানুষ এখন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে উঠেছে। কেউ আবার অনন্যোপায় হয়ে পানির মধ্যেই ঘরবন্দি।

গত সোমবার সন্ধ্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে রাজু মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, 'কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমনভাবে বেড়ে গেল। নিজেদের জীবন নিয়ে কোনোমতে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। ঘরে ধান-চাল সব রাখিয়া আইছি। নিজের একটা নৌকাও নাই যে এগুলো লগে লইয়া যাইতাম। ঘরের মধ্যে ধান-চাল পানিতে ভিজিয়া নষ্ট হয়েছে। এখন মানুষের হাতের দিকে চাইয়া আছি। কেউ দিলে আমরা খাইতাম।'

এখানেই কথা হয় মুর্শিবাদকুরা গ্রামের তাজুল ইসলামের (৫৫) সাথে। তিনি বলেন, 'ঘরে যা আছে তা রাখিয়া আইছি। লগে আনার পরিস্থিতি আছিল না। সব শেষ। আশ্রয়কেন্দ্রে আইছি তুড়া (অল্প) চিড়া-মুড়ি পাইছি বাবা। ভাতের পেট। তোলা পানিয়ে পেট ভরে না। এখন কপালে দুর্গতি থাকলে তো আর কষ্ট করা ছাড়া উপায় নাই রেবা।'

রাজু মিয়া, তাজুল ইসলামের মতো একই অবস্থা মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর, বর্ণি, দাসেরবাজার, নিজবাহাদুরপুর, উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণভাগ উত্তর উত্তর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষের। গত কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় খোলা হয়েছে ৩৫টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে গ্রামীণ, ইউনিয়ন ও উপজেলা সড়ক রয়েছে। বিশেষ করে হাকালুকি পারের তালিমপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা। এছাড়া সুজানগর, বর্ণি, দাসেরবাজার, নিজবাহাদুরপুর, উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণভাগ উত্তর উত্তর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের রাস্তা তলিয়েছে।

এদিকে বন্যায় বড়লেখা উপজেলার ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৮টি পানিবন্দি এবং ২৩টি বিদ্যালয়কে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলিয়ে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫টি পানিবন্দি অবস্থায় আছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক আমরা দুর্গত এলাকার খোঁজখবর রাখছি। মঙ্গলবার সব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবারের পাশাপাশি খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া যেসব সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে, তাদের সাথে আমরা সমন্বয় রাখছি। যাতে সকল মানুষের হাতে খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Leather legacy fades

As the sun dipped below the horizon on Eid-ul-Azha, the narrow rural roads of Kalidasgati stirred with life. Mini-trucks and auto-vans rolled into the village, laden with the pungent, freshly flayed cowhides of the day’s ritual sacrifices.

18h ago