আন্দোলন বন্ধের ও সাংবাদিকদের সঙ্গে রুঢ় আচরণের অভিযোগ এসপির বিরুদ্ধে

ঢাকার আশুলিয়ায় শিক্ষার্থীর স্টাম্পের আঘাতে কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার নিহতের ঘটনায় আন্দোলন বাদ দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারের বিরুদ্ধে।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার আশুলিয়ায় শিক্ষার্থীর স্টাম্পের আঘাতে কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার নিহতের ঘটনায় আন্দোলন বন্ধ করে কলেজ অধ্যক্ষকে প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও কলেজ প্রাঙ্গণে উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিয়ে ক্যামেরা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণের অভিযোগও উঠেছে।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, 'এসপি সাহেব বলেছেন সব কিছু বাদ দিয়ে যেন আমরা কাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কলেজের কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু তিনি (এসপি) বললেও এটি তো আমাদের দ্বারা সম্ভব না। আমরা কি আমাদের সহকর্মীর লাশের ওপর দিয়ে কলেজ চালাবো। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।'

অধ্যক্ষ বলেন, 'তিনি (এসপি) তার কথা বলেছেন, কাল আমাদের সাভার উপজেলা চত্বরে সারাদেশের শিক্ষকদের কর্মসূচি আছে। এ ঘটনার পেছনে যারা আছে তাদেরও আইনের আওতায় এনে সাজা নিশ্চিত করার দাবি আমাদের।'

'যদিও এসপি সাহেব বলেছেন তিনি আমাদের নিরাপত্তা দেবেন, কিন্তু যে প্রকাশ্যে কাউকে খুন করতে পারে, আমি মনে করি নিশ্চয়ই তার পেছনে আরও কেউ আছে এবং যদি তারা আবারো আমাদের কোনো শিক্ষকের উপর হামলা করে, তার দায় কে নেবে,' বলেন অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম।

এসময় কয়েকজন শিক্ষকও এসপির আচরণে দুঃখ প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে এসপির রুঢ় আচরণ নিয়ে সেখানে অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে উপস্থিত বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ তুহিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেখানে সাভারের অনেক স্থানীয় সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। এসপি সাহেব এসেই উচ্চস্বরে তাদের ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন, কলেজে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন।'

'তখন প্রচুর বৃষ্টিও হচ্ছিল, পরে আমি ভেতরে যাই, আমার পেছনে পেছনে অনেক স্থানীয় সাংবাদিকরা যান, তখন তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন তিনি। আমি এসপি সাহেবের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি (এসপি) বলেন , "তাহলে আপনারাই তদন্ত করেন, আমি চলে যাই'। পরে আমরা বের হয়ে আসি। পরে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি পুলিশ সুপার হয়তো তাকে এমন কিছু বলেছেন, যাতে তিনি কষ্ট পেয়েছেন।'

'সাংবাদিকরা ঘটনার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে মামলার প্রধান অভিযুক্ত তখনও গ্রেপ্তার হয়নি, আলামত জব্দ করা হয়েছে অনেক পরে, অভিযুক্তের বয়সও এজাহারে কম দেখানো হয়েছে এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল বিধায়ই আমরা তার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। দূর থেকে ফুটেজ নিলে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়,' বলেন তুহিন।

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেন, 'পরবর্তীতে এসপি সাহেব আমাদের সাথে কথা বলেছেন। প্রশ্ন করেছিলাম যে ৪ দিন আগের ঘটনা হলেও আপনি আজই প্রথম এখানে এসেছেন, তাছাড়াও মামলার আলামত আপনারা জব্দ করেছেন ঘটনার ৩ দিন পর, পাশাপাশি প্রধান অভিযুক্ত এখনো পলাতক, এসব প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, তার কর্মকর্তারা নিয়মিত সেখানে যাচ্ছেন এবং মূল আসামিকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।'

কলেজ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি কলেজ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেব কেন? নির্দেশ দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমি কলেজে গিয়েছিলাম তদন্তের জন্য, তাদের (শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের) নিরাপত্তার জন্য। এছাড়া আমি বলেছি সামনে ঈদ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে, ছাত্র ছাত্রীদেরতো কিছু শেখাতে হবে।'

এসপি বলেন, 'আমি মূলত নিরাপত্তা নিশ্চিত ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গিয়েছি। আগামীকাল থেকে আমাদের পুলিশ টিম নিয়মিত সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।

সাংবাদিকদের সাথে রুঢ় আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কোনো সাংবাদিকের সাথে রুঢ় আচরণ করা হয়নি। সাংবাদিকরা সব সময় ক্যামেরা নিয়ে লেগেই ছিল। আমি অধ্যক্ষের সাথে কথা বলার সময় ওনার (অধ্যক্ষ) কক্ষেও সাংবাদিকরা ফুটেজ নিতে যায়। তখন আমি বলেছি আপনার ক্যামেরা বন্ধ করুন। ওখানে ঢাকার একজন সাংবাদিকই ঝামেলার সৃষ্টি করেছেন।'

আমাদের তদন্তের সময় ক্যামেরা তাক করে রাখলে সেটা কতটা পেশাগত আচরণ হয়, প্রশ্ন করেন এসপি।

Comments