শিশুর ত্বকের সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসা
সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ২০-৩০ ভাগ শিশু ত্বকের রোগের কারণেই অসুস্থতায় ভোগে। বড়দের চেয়ে শিশুর ত্বকের গঠন অসম্পূর্ণ। যেমন: স্তরগুলো হালকা ও পূর্ণমাত্রায় বিকশিত না হওয়া, কোষের মাঝে গাঁথুনি দুর্বল, তেল বা সেবাম ও ঘাম নিঃসরণ ক্ষমতা কম ইত্যাদি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ইন্দ্রিয় শক্তি পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় না থাকায় সংক্রামক ও অ্যালার্জিসহ প্রদাহজনিত ত্বকের বিভিন্ন রোগাক্রান্তের সম্ভাবনা শিশুদের থাকে বেশি। বিশেষ করে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় শিশুদের ত্বকে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। আমাদের দেশে মিজেলস বা হাম, চিকেনপক্স বা জলবসন্ত ও ইমপেটিগো বা সামার বয়েলের সংক্রমণ বেশি দেখা দেয়। এসব রোগ ছোঁয়াচে বা আক্রান্তদের মাধ্যমে ছড়ায়।
শিশুর সংক্রমণজনিত ত্বকের রোগের ভাগ
শিশুর সংক্রমণজনিত ত্বকের রোগ কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
* ভাইরাসজনিত: চিকেন পক্স বা জলবসন্ত, হাম, রুবেলা বা জার্মান মিজেলস, হারপিজ সিমপ্লেক্স, হারপিজ জোস্টার, ওয়ার্ট, মাম্পস, কনডাইলোমেটা ইত্যাদি ত্বকের রোগ ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
* ব্যাকটেরিয়াজনিত: ইমপেটিগো বা সামার বয়েল, ফলিকুলাইটিস, ইরাইসিপেলস, ফারাঙ্কেল, কারবাংকেল, কুষ্ঠ ও অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
* ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত: ক্যানডিডিয়াসিস, ইরাইথ্রাসমা, টিনিয়া ভারসিকলার, টিনিয়া ক্যাপিটিস, টিনিয়া পেডিস ইত্যাদি ফাঙ্গাসজনিত কারণে হয়ে থাকে।
* প্যারাসাইট বা পরজীবীজনিত: স্ক্যাবিস বা খোঁসপাচড়া, পেডিকুলোসিস বা উকুন, মিয়াসিস, ট্রমবিকুলোসিস, লেকটুলারিয়াস ইত্যাদি।
* চিকিৎসা: শিশুর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় অতি দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। রোগ নির্ণয়ের পর, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করলে সহজেই আরোগ্য লাভ করা যায়।
প্রতিরোধ
* সংক্রামক রোগাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে শিশুকে দূরে রাখুন
* শিশুর পরিধেয় পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখুন
* শিশুকে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন এবং ঘাম তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলুন
* বেশিরভাগ ভাইরাসজনিত রোগের জন্য প্রতিরোধক টিকা পাওয়া যায়। শিশুকে টিকা দিন
মনে রাখবেন সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ না করলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ সমস্যা পোহাতে হতে পারে। এমনকি ত্বকের রোগে সৃষ্ট জটিলতা অন্যান্য অঙ্গকে প্রভাবিত করে শিশুর জীবনহানির কারণ হতে পারে। তাই শিশুর ত্বকে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
Comments