জীবনযাপন

সাইকেল কেনার আগে

আপনি কি কখনো বাসে যাতায়াতের সময় তীব্র যানজটে আটকা পড়েছেন যা মনেপ্রাণে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন? ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপটে প্রশ্নটি খুবই হাস্যকর! কারণ ঢাকার রাস্তায় যাতায়াতের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয় বরং সর্বদা ভয়ঙ্কর। ভাবুন তো আপনি যদি নিজে ২ চাকার একটি সাইকেলের উপর থাকেন তাহলে হামিংবার্ডের মতো ট্র্যাফিকের মধ্য দিয়ে উড়ে যেতে পারবেন!
ছবি: রাইডার্স ৭১

আপনি কি কখনো বাসে যাতায়াতের সময় তীব্র যানজটে আটকা পড়েছেন যা মনেপ্রাণে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন? ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপটে প্রশ্নটি খুবই হাস্যকর! কারণ ঢাকার রাস্তায় যাতায়াতের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয় বরং সর্বদা ভয়ঙ্কর। ভাবুন তো আপনি যদি নিজে ২ চাকার একটি সাইকেলের উপর থাকেন তাহলে হামিংবার্ডের মতো ট্র্যাফিকের মধ্য দিয়ে উড়ে যেতে পারবেন!

সাইকেল খুবই পরিচিত একটি যান যা গ্রামীণ এলাকায় পরিবহনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। শহরের বড় বড় রাস্তায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে সাইকেলের ব্যবহার একটা তেমন নেই। তবে শহরেরও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

কেন সাইকেল কিনবেন?

ছবি: রাইডার্স ৭১

অনেকগুলো কারণেই সাইকেল কেনা যেতে পারে। এর মধ্যে  সবচেয়ে বড় কারণ-পরিবহনের জন্য। আপনি যদি একটি সহজ যানবাহন চান যা আপনাকে কাজে নিয়ে যায় এবং কাজ শেষে বাড়ি নিয়ে আসে, তাহলে আপনার অবশ্যই একটি সাইকেল কেনা উচিত। এটি আপনার প্রতিদিনের বাসের ভাড়া বাঁচাবে এবং সাইকেলের মাধ্যমে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে সরু রাস্তা ব্যবহার করতে পারেন। ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে আটকে না থেকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। এটি আপনাকে বাসের হ্যান্ডেল ঝুলে বাড়ি ফেরার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়। অনেক সময় সড়কে বাস চলাচল করে না। তখন সাইকেলই আপনার পরম বন্ধু।

সাইকেল চালানোর মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য অর্জন করা সম্ভব। নিয়মিত সাইকেল চালালে মনোবল বৃদ্ধি করে এবং পেশী তৈরিতে সাহায্য করে। এটি হৃৎপিণ্ড, ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করে। সাইকেল চালানো মানে আপনাকে প্রতিদিনের ব্যায়াম নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনার ক্ষুধা বৃদ্ধি পাবে এবং রাতে আরও ভালো ঘুমাতে পারবেন।

ছবি: রাইডার্স ৭১

কোন সাইকেল কিনবেন?

সাইকেল কেনার আগে আপনাকে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। প্রথমত, আপনি কী উদ্দেশ্যে সাইকেল চালাতে চান তার উপর নির্ভর করবে কেমন ধরনের সাইকেল আপনার জন্য ভালো হবে। আপনি কি শুধু শখের জন্য সাইকেল চালাতে চান? নাকি যাতায়াত?  অথবা আপনি কী সাইকেল দিয়ে দীর্ঘ সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন?  আপনার প্রয়োজন আপনাকে কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্তে নিয়ে যাবে। কিন্তু ঢাকা শহরের জন্য এবং নৈমিত্তিক যাতায়াতের পাশাপাশি নতুনদের জন্য, মাউন্টেন বাইক (MTB) একটি ভালো পছন্দ।

 'এটি ঢাকার রাস্তার জন্য উপযোগী এবং পরিচালনা করা সহজ', এমনটাই মনে করেন ঢাকার অন্যতম সক্রিয় সাইক্লিং গ্রুপ 'রাইডার্স ৭১' এর অ্যাডমিন সাকিউল ইসলাম আন্তর।

আপনি লক্ষ্য করবেন যে সাইকেলে হ্যান্ডেলগুলোর বিভিন্ন শৈলী, বিভিন্ন ধরণের ব্রেক এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে। যেটি চালাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এমন সাইকেলই বেছে নেওয়া উচিত।

ছবি: রাইডার্স ৭১

গোল্ডেন হুইল বিডি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জুবায়ের আহমেদ বলেন, 'প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য, গিয়ার ছাড়া সাইকেল বাছাই করার চেষ্টা করুন। গিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ খুবই ঝামেলার কাজ। তাই দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের জন্য গিয়ার ছাড়া সাইকেল কেনাই ভালো।'

অন্যান্য অনুষঙ্গ কেনার আগে যা মনে রাখবেন

সাইকেল কেনার পর আপনার ভ্রমণ নিরাপদ এবং মসৃণ করতে আরও কয়েকটি জিনিসপত্রের প্রয়োজন হবে৷ প্রথমেই আপনাকে একটি হেলমেট কিনতে হবে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে তাই হেলমেট ছাড়া সাইকেল চালানো উচিত নয়। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গ্লাভস, হাঁটুর প্যাড এবং একজোড়া গগলসও ব্যবহার করা উচিত।

সাইকেল আপনার সঙ্গী কিন্তু তা চুরি গেলে বিষয়টা হবে কষ্টকর। সুতরাং, সাইকেলের নিরাপত্তার জন্য, তালা কিনতে হবে। তালার অনেক রকমের হয়, যেমন তালা আপনার পছন্দ তেমনটিই বেছে নিন। রাস্তায় চলাচলের জন্য, একটি হর্ন কিনতে হবে এবং আপনার যদি রাতে সাইকেল চালানোর কোন পরিকল্পনা বা সম্ভাবনা থাকে তবে আপনাকে হেডলাইট এবং টেললাইট কিনে নিতে হবে। শহরে সাইকেল চালানোর জন্য এই দুটো জিনিসই ব্যবহার করা উচিত।

রক্ষণাবেক্ষণ

ছবি: রাইডার্স ৭১

সাইকেলকে একটি ইস্পাতের ঘোড়া হিসেবে ভাবুন। ঘোড়ার যেমন পরিচর্যা প্রয়োজন, তেমনি সাইকেলেরও রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। নিয়মিত ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে এটি দীর্ঘদিন ভালো অবস্থায় থাকবে। সাইকেল ব্যবহার না করে ঘরের এক কোণে রেখে দিলে এর কর্মক্ষমতা কমে যাবে। রক্ষণাবেক্ষণের খরচ খুব বেশি নয়। বেশিরভাগ ছোট সমস্যা কিছু সহজ সরঞ্জামের সাহায্যে আপনি নিজেই মিটিয়ে ফেলতে পারবেন।

সাকিউল ইসলাম আন্তর বলেন, 'আপনার যদি একটি প্যাচ কিট, টায়ার লিভার, অ্যালেন কী, প্লায়ার, চেইন কাটার এবং পাম্পার থাকে তবে আপনি নিজেই সাইকেলের যেকোনো সমস্যা সারাতে পারবেন।'

তবে জটিল ব্রেকিং মেকানিজমে সমস্যার মত জটিল বিষয়গুলো নিজে ঠিক করা উচিত নয়, এক্ষেত্রে পেশাদারদের শরণাপন্ন হতে হবে।

কোথায় কিনবেন সাইকেল?

ঢাকায় আপনি সাইকেল কিনতে পারেন এমন অনেক জায়গা রয়েছে। গুলশান লিংক রোড, তেজতুরী বাজার, মিরপুর- এই সব জায়গায় সাইকেলের অনেক দোকান আছে। তবে 'বংশাল সাইকেল মার্কেট', ঢাকার সবচেয়ে বড় সাইকেল মার্কেট।

গোল্ডেন হুইল বিডির মো. জুবায়ের আহমেদ বলেন, 'বাইসাইকেলের বাজার আমদানির উপর খুব নির্ভরশীল এবং সেখানে বংশালই বেশিরভাগ আমদানিকারক। আপনি বংশালে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত আনুষাঙ্গিক ও সরঞ্জাম পাবেন।

ক্যাফে সাইক্লিস্ট, বাইকশপ বিডি, সাইকেল সার্জারি হল ঢাকায় কয়েকটি নামীদামী দোকান যারা সাইকেলের সঙ্গে বিভিন্ন আনুষাঙ্গিকও দিয়ে থাকে।

সাইকেলে অভ্যস্ত জীবন

সাইকেল চালানো শিখতে বেশি সময় লাগে না এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি আরও সহজ। একবার সাইকেল চালানো শুরু করলে, বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সাইকেল ট্যুরের পরিকল্পনাও করতে পারেন। ঢাকার আশেপাশে বসিলা, কেরানীগঞ্জ, মাওয়া রোড, গ্রিন মডেল টাউন, আমুলিয়া মডেল টাউন, মিরপুরের বেশ কিছু স্পট আছে যেখানে সাইকেল চালানোর জন্য উপযোগী।

আপনি যেকোনো সাইক্লিং কমিউনিটিতে যোগ দিতে পারেন কারণ তারা নিয়মিত বিভিন্ন সাপ্তাহিক ইভেন্টের আয়োজন করে। এই কমিউনিটিগুলো ঘুরে বেড়ানো, বন্ধু তৈরি এবং নিজেকে চাঙা করে তোলার একটি দুর্দান্ত উপায়।

বিডি সাইক্লিস্ট, রাইডার্স ৭১, উত্তর ঢাকা সাইক্লিস্ট, দক্ষিণ ঢাকা সাইক্লিস্ট, ফ্যামিলি সাইক্লিস্ট বেশ কিছু সক্রিয় গ্রুপ।

মনে রাখবেন, সাইকেল চালানো সময় বাঁচানোর একটি সহজ উপায়। কিন্তু সময় বাঁচাতে বেপরোয়াভাবে সাইকেল চালানো সবসময় এড়িয়ে চলা উচিত। সাইকেল রাস্তায় সবচেয়ে হালকা যান। এজন্য দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, সাইকেল আরোহীর আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং, নিরাপদ থাকুন, নিরাপদে সাইকেল চালান এবং সবসময় হেলমেট ব্যবহার করুন।

অনুবাদ করেছেন ফাবিহা বিনতে হক

Comments