ভোটারের আস্থা ফেরাতে নির্বাচন কমিশন প্রযুক্তিমুখী

নির্বাচন কমিশনের লোগো। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা ফেরানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন।

দ্য ডেইলি স্টারকে এমনটিই জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

তারা জানান, এর অংশ হিসেবে ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা ছাড়াও, ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা এবং ভোট কেন্দ্রের তথ্য হালনাগাদ করার জন্য ও ভোটারদের নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য অ্যাপ চালু করবে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনাই কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং তা কাটিয়ে উঠতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারই সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা গতকাল মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুরো বিশ্ব প্রযুক্তির সাহায্যে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? ইভিএম ও সিসিটিভি ক্যামেরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।'

তিনি জানান, তারা বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ইভিএম ও সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করেছে। সেই নির্বাচনগুলো শান্তিপূর্ণ হয়েছে।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'একজন ব্যক্তির পক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে একাধিক ভোট বা জাল ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। অতীতে আমরা দেখেছি, যেসব ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল সেখানে পেশী শক্তির ব্যবহার প্রায় ছিলই না। আমরা খুব ভালো ফলাফল পেয়েছি। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছি।'

তবে রাশিদা সুলতানা জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে কি না, সে বিষয়ে কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

নির্বাচন কমিশন আজ নির্বাচনী রোডম্যাপ উন্মোচন করবে। এতে থাকবে ইভিএম ব্যবহার, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নতুন দল নিবন্ধন, ফলাফল সংগ্রহে প্রযুক্তির ব্যবহার, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময়কাল।

প্রধান বিরোধী দলগুলো আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করলেও নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০টিতে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

রাশিদা সুলতানা জানান, সব সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় ও জেলা সদরে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে।

তিনি বলেন, 'তবে আমরা গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কমিশনের কাছে ইতোমধ্যে প্রার্থী ও নির্বাচনী ফলাফলের তথ্য সংরক্ষণের সিস্টেম সফটওয়্যার রয়েছে। এবার এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চায় তারা।

তারা বলেছে, কমিশন এখন এমন একটি সিস্টেম সফটওয়্যারের পরিকল্পনা করছে, যার মাধ্যমে সরাসরি যেকোনো ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী বছরের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তির পর ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

কমিশন সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে ১১ কোটি ৩৩ লাখ ভোটার ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সংখ্যাটা বাড়তে পারে, কারণ আগামী বছরের জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে, তারা ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন।

সংবিধান অনুযায়ী, পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হতে হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে। বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়ায় এর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিন আগে পরবর্তী নির্বাচন হতে হবে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী জুনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া শেষ করবে কমিশন।

এ ছাড়া, একটি অ্যাপ চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভোটাররা প্রার্থীদের হলফনামা এবং ভোট কেন্দ্রের তথ্য পাবেন। এর মাধ্যমে ভোটাররা অনলাইনে ভোট সংক্রান্ত অভিযোগও করতে পারবে।

রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে গত কয়েক মাস ধরে কমিশন রাজনৈতিক দল, অংশীজন এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করেছে। তাদের বেশিরভাগই বলেছেন, নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাই কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই বলে বিএনপিসহ আরও কয়েকটি বিরোধী দল আলোচনায় যোগ দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। তবে 'কোন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করবে না'।

Comments

The Daily Star  | English

'Election Commission shamelessly favouring a particular party'

Hasnat Abdullah says police obstructed NCP leaders and activists from entering EC building

13m ago