‘আল্লাহর কসম, ধর্মঘটের জন্যে সরকার কোনো ভয় দেখায়নি’
রংপুরে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর ধর্মঘট ডাকে বাস মালিক সমিতি, যদিও কারণ বলা হয়েছে ভিন্ন। রংপুরে পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃত্বে আছেন সদ্য জাতীয় পার্টির সব পদ থেকে বহিস্কৃত নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা।
রংপুরের ধর্মঘট, দলীয় পদ থেকে বহিস্কার, বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও সংসদ সদস্যের পদ হারানোর আলোচনাসহ নানা বিষয়ে আজ রোববার সকালে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তিনি।
দ্য ডেইলি স্টার: আপনাদের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি বিশাল জনসমাগমে সমাবেশ করলো। সেইসময়ে আপনারা ব্যস্ত দলীয় কোন্দলে। বিএনপির এই সমাবেশকে কীভাবে দেখছেন?
মশিউর রহমান রাঙ্গা: সমাবেশে মানুষ দেখে কোনো দলের শক্তিমত্তা বোঝা যায় না। ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন ক্ষমতায়, তখন তিনি বিশাল সমাবেশ করলেন। এর ২ দিন পর তাকে পদত্যাগ করতে হলো। এখনো যদি আওয়ামী লীগ সমাবেশ করে, সেখানেও অনেক মানুষের সমাগম হবে। কিন্তু মানুষের মতামত জানা যাবে নির্বাচন, যদি প্রকৃত নির্বাচন হয়।
ডেইলি স্টার: জনসমাগম দেখে প্রকৃত চিত্র বোঝা যায় না। তাহলে বিএনপি যখন সমাবেশ করতে যাচ্ছে, তখন বাস মালিকরা কেন ধর্মঘট ডাকছে? আপনিও তো এর অংশ।
রাঙ্গা: ২০১৪ সালে, আমি তখন সমবায় প্রতিমন্ত্রী, আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অজস্র গাড়ি ভেঙে দিলো। আমি তখন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনের সভাপতি ছিলাম। আমাদের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন পরিস্থিতিগুলোতে। আমাদের গাড়ি ভাঙবে-পোড়াবে, কর্মীরা মারা যাবে, সেটা তো হতে দেব না।
ডেইলি স্টার: সম্প্রতি যে ধর্মঘট আপনারা ডেকেছেন, সেখানে মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও থ্রি হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ এবং রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে 'প্রশাসনিক হয়রানি' বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এখন আপনি যা বলছেন, আর ধর্মঘটের যে দাবি জানানো হয়েছে, তার মধ্যে কি মিল থাকছে?
রাঙ্গা: অবশ্যই মিল নেই। আমি রংপুর জেলা বাস মালিক সমিতিরও সম্পাদক। আমি কোনো ধর্মঘট ডাকিনি।
ডেইলি স্টার: তাহলে ধর্মঘট ডাকলো কে?
রাঙ্গা: ধর্মঘট সাধারণ মালিকরাই ডেকেছেন। তারা বলছেন, আমরা ভাই গাড়ি চালাবো না, কারণ কোনো সমস্যা হলে আমাদের কেউ ক্ষতিপূরণ দেবে না।
ডেইলি স্টার: কিন্তু ধর্মঘট ডাকার কারণের মধ্যে তো এসব বিষয় আসেনি, ক্ষতিপূরণের বিষয় আসেনি।
রাঙ্গা: এই বিষয়টি তারা উহ্য রেখেছেন। মালিকরা আমাকে বলেছে, ২ হাজার বা ৫ হাজার টাকার জন্য দেড় কোটি-২ কোটি টাকা দামের গাড়ি ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না, গাড়ি চালাতে চাই না। আমিও বলেছি, তেমন হলে গাড়ি চালাবেন না।
ডেইলি স্টার: এই ঘটনায় কি মনে হলো না যে আপনারা সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করলেন?
রাঙ্গা: সেটা যদি মনে হয়, তাহলে আমরা বিএনপির পক্ষেও কাজ করেছি। একবার আওয়ামী লীগের জাতীয় প্রোগ্রাম ছিল। শিমুল বিশ্বাস তখন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি সারা দেশে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলেন।
ডেইলি স্টার: তখন বিএনপি সরকারের পক্ষে কাজ করা হয়েছে, সেটা মোটামুটিভাবে স্বীকৃত। যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, আপনারা তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করেন— এমন অভিযোগ তো আছেই।
রাঙ্গা: এ ছাড়া উপায় নেই। আমরা ভয়ে তাদের পক্ষে কাজ করি।
ডেইলি স্টার: এখনো কি ভয়ে ধর্মঘট ডাকলেন?
রাঙ্গা: অবশ্যই। আবারও বলছি, আমরা ধর্মঘট ডাকিনি, মালিকরা নিজেরাই গাড়ি চালায়নি।
ডেইলি স্টার: ভয়টা কি সরকারের, নাকি বিএনপির?
রাঙ্গা: আল্লাহর কসম, সরকার আমাদের কোনো ভয় দেখায়নি। মালিকরা নিজেরাই বন্ধ রেখেছে। ২ দিন বাস না চালাচ্ছে কিচ্ছুই যায় আসে না। এই ধর্মঘটে সমাবেশের যে কোনো ক্ষতি হয়েছে, তাও আমার কাছে মনে হয় না।
ডেইলি স্টার: অভিযোগ আছে, আপনারা সব সময় সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করেন।
রাঙ্গা: আমরা ভয়ে কাজ করি, বিরোধী দলের ভয়ে কাজ করি। আমাদের ভয় থাকে, গাড়ি যেন না ভাঙে। সরকারের ভয় করি না। সরকার আমাদের কী করবে? সরকার আমাদের গাড়ি ভাঙে না, ধরে নিয়ে যেতে পারে। এর বেশি কিছু না।
ডেইলি স্টার: দলীয় প্রশ্নে আসি। এখন আপনার দলে কোনো পদ নেই, সংসদ সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েও আলোচনা চলছে।
রাঙ্গা: ঘোষণা তো এসেছে আমি বিরোধী দলের চিফ হুইপ নেই। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই জানতে পারবেন আমি ওই পদে আছি কি না। আবার সংসদ সদস্য নিয়ে আলোচনা চলছে। এসব বললে তো আর হয় না, আইন-কানুন জানতে হয়। বাংলাদেশে সংবিধান আছে। এটা তো আর দলীয় বিধি না, যেটা নিজের মতো তৈরি করবেন।
এখানে স্বেচ্ছাচারিতা বেশি হয়ে গেছে। এটাকে এখন আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না। আমি ৩৮ বছর ধরে জাতীয় পার্টির জেলা সম্পাদক, ১৮ বছর প্রেসিডিয়াম সদস্য। অথচ, কোনো চিঠি না দিয়ে, কোনো কথা না বলে দলের গঠন ও নিয়মের ২০ ধারা দেখিয়ে আমাকে বহিস্কার করেছে। এটা কি কোনো গলতান্ত্রিক দল হতে পারে?
ডেইলি স্টার: প্রথম দিকে আপনি বেশ কড়া অবস্থানে ছিলেন, পরে নমনীয় হলেন। আপনাদের কি মীমাংসা হচ্ছে, নাকি কোন্দলের মধ্যেই থাকছেন?
রাঙ্গা: আমি মীমাংসার পক্ষে। আমি তো জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য দল করবো না। এখন দলের নেতৃত্ব কে দেবে, সেটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আসলে ভালো। সবার সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না। আমি রাজনীতি না করলে কী হবে? আমি ২০০১ সাল থেকে সংসদ সদস্য, মন্ত্রীও ছিলাম। রাজনীতি না করলে আমরা কিছু যায় আসে এখন?
ডেইলি স্টার: এখন রওশন এরশাদের সঙ্গে বেশি নেতা-কর্মী আছেন, নাকি জিএম কাদেরের সঙ্গে বেশি নেতা-কর্মী আছেন?
রাঙ্গা: দলীয় নেতা-কর্মীদের অবস্থান ২ পক্ষেই আছে।
ডেইলি স্টার: কাদের পাল্লা ভারি?
রাঙ্গা: যারা অফিসে বসে থাকে তাদের পাল্লা ভারি। রওশন এরশাদ তো অসুস্থ।
ডেইলি স্টার: তার মানে আপনারা একটা দুর্বল অবস্থানে আছেন।
রাঙ্গা: বলা যায়।
Comments