চাকরিতে নিয়োগ সহজ করবে যে ৫ ‘সফট স্কিল’
চাকরিতে পছন্দের পদটি পাওয়ার জন্য কেবল জীবনবৃত্তান্ত নয়, যোগ্য প্রার্থী মূল্যায়নের জন্য নিয়োগকারীরা অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতিও নজর দেন। প্রায় সব ধরনের চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে চাকুরিদাতা প্রার্থীর 'সফট স্কিলের' প্রতি বেশি আগ্রহী থাকেন।
সফট স্কিল মানুষের এমন কিছু চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, যা অন্যের সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করতে শেখায়। এই দক্ষতাগুলো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে, আস্থা বাড়াতে এবং দলগতভাবে কাজ করতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য কোন বিষয়ের উপর দক্ষতা থাকা আবশ্যক তা বাজার এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তাই প্রার্থীকে এমন কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে যা নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান বা পদের জন্য যেমন অনন্য হবে তেমনি যেকোনো পেশার জন্য উপযোগী হবে।
আজকের আলোচনায় আছে আপনার পরবর্তী চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারে এরকম অত্যাবশ্যকীয় ৫টি সফট স্কিল।
যোগাযোগ
চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে মৌখিক এবং লিখিত যোগাযোগের উপর ভালো দখল না থাকলেই নয়। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমেই যে কোনো ধ্যান-ধারণার বহিঃপ্রকাশ ও আদান প্রদান ঘটে। ফলে যেকোনো পেশার জন্য কার্যকরী যোগাযোগ দক্ষতা থাকা মোটামুটি অপরিহার্য একটি বিষয়। কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়।
যোগাযোগের মাধ্যমে মনোবল বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মীদের মধ্যে সংযোগ, উৎপাদনশীলতা ও সন্তুষ্টিও বাড়ানো সম্ভব। দলগত কাজে সদস্যদের নিজেদের মধ্যে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য সুফল বয়ে আনতে যোগাযোগ দক্ষতার বিকল্প নেই।
এসব কারণে, চাকুরিদাতা বা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ব্যক্তি প্রথমেই প্রার্থীর যোগাযোগ দক্ষতা ও সক্ষমতা যাচাইয়ের দিকে নজর দেন।
সমস্যা সমাধান
যেকোনো সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের তালিকা থেকে সবচেয়ে কার্যকর ও উপযুক্ত বিকল্পটি বাছাই করতে পারার সক্ষমতাকেই সমস্যা সমাধান দক্ষতা বলা যায়। এ দক্ষতার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার পুনর্বিন্যাস করার পাশাপাশি সেগুলো মোকাবিলা করার অভিনব প্রক্রিয়া খুঁজে পাওয়া যায়।
এই দক্ষতা জীবনের সকল ক্ষেত্রে কাজে লাগে। তাই নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়ার সময় তারা কত দ্রুত এবং সৃজনশীলভাবে সমস্যার সঠিক সমাধান বের করতে পারে তা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়। এ দক্ষতা যাচাই করে নিয়োগকারী চাকরি প্রার্থীর যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি, পার্শ্বীয় চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা, স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজন যোগ্যতা সম্পর্কেও ধারণা পান।
একটি প্রতিষ্ঠানের নিম্ন পদের কর্মী থেকে শুরু করে নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যন্ত সকল পর্যায়ে সমস্যা সমাধান দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে। প্রকল্প চলাকালীন যেসব বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় তা কাটিয়ে ওঠার জন্য একজন কর্মীর মাঝে এই দক্ষতা বেশ কাজে দেয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা, সবধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং সমাধানের নতুন বিকল্প খুঁজে বের করার জন্য মূল প্রকল্প বা পরিচালনা দলের সদস্যদের বিশেষ দক্ষতা হিসেবে কাজ করে এটি।
আত্নসচেতনতা
নিজের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতির পাশাপাশি নিজ সম্পর্কে অন্যান্য লোকের উপলব্ধি জানা এবং বোঝার ক্ষমতাকে বলা হয় আত্মসচেতনতা। চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় চাকুরিদাতা কীভাবে প্রার্থীর উত্তরগুলো বিশ্লেষণ করবেন, তা উপলব্ধি করা খুবই প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে আত্মসচেতনতা।
নিজের দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা ও সেগুলো কাটিয়ে ওঠা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকুরিদাতা যখন প্রার্থীর দক্ষতার তালিকায় চোখ বুলাবেন তখন প্রার্থীর ত্রুটি সম্পর্কেও জানতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে দক্ষতাগুলোর দিকে চাকুরিদাতার মনোযোগ আকর্ষণ করার পাশাপাশি নতুন পদের জন্য প্রয়োজনীয় পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির ইচ্ছে প্রকাশ করাও আত্মসচেতন থাকার পরিচায়ক।
জটিল বিষয়গুলোকে সহজ করে তোলার দক্ষতা
নিয়োগকর্তারা সবসময় সেসব প্রার্থীদের পছন্দ করেন, যারা তাদের চিন্তাশক্তি ব্যবহার করে জটিল বিষয়গুলোকে সহজ করে তুলতে সক্ষম। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে এ ধরুনের চিন্তা (ইংরেজিতে ক্রিটিকাল থিংকিং) করার দক্ষতা থাকেলে কর্মীরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বের করে আনতে পারে এবং নতুন পরিকল্পনা করে আরও ভালো কাজ করতেও তা সহায়তা করে। এ ছাড়াও, সমস্যা অনুসন্ধান, সমাধানের নতুন উপায় এবং যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এটির বিকল্প নেই। আর এমন যোগ্য কর্মী খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে।
কর্মক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধান করেন, তাদের মধ্যে সব পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতি দায়বদ্ধতা, মনোযোগ, ও সহনশীলতার মতো বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও, এ ধরনের দক্ষতা আইন, শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা ও আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যেসব চাকরিতে নিরপেক্ষ ভাবে তথ্য সংগ্রহ, পরিস্থিতির বিশ্লেষণ, সমস্যা সমাধানে সৃজনশীলতা ও অর্থবহ সমাধান খুঁজে বের করার মতো কাজ করতে হয়, সেখানে এই দক্ষতা অত্যাবশ্যক। কর্মক্ষেত্রের বাইরেও জটিল বিষয়কে সহজ করে তোলার এই দক্ষতা দীর্ঘ মেয়াদে ক্যারিয়ারকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে থাকে।
আত্নবিশ্বাস
একজন চাকুরীদাতা সম্ভাব্য কর্মীকে কীভাবে যাচাই করবেন তা অনেকাংশেই নির্ভর করে সাক্ষাৎকারের সময় প্রার্থী কতটা আত্মবিশ্বাস দেখাতে পারে, তার ওপর। তাই চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আপনার অভিজ্ঞতা, কৃতিত্ব এবং দক্ষতার বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে হতে হবে, যাতে সর্বক্ষেত্রে আপনার আত্নবিশ্বাসের পরিচয় পাওয়া যায়।
এ ক্ষেত্রে শুধু নিজের যোগ্যতা নিয়ে কথা না বলে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বিনীতভাবে আপনার নিজের প্রতি আস্থা থাকার বিষয়টি প্রকাশ করতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে তবেই না নিয়োগকর্তাও আপনার ওপর ভরসা স্থাপন করতে পারবেন!
দীর্ঘ সময় ধরে সাক্ষাৎকার চললে দাকুরিদাতাকে আপনার এটা বোঝা হবে যে চাকরিটি সম্পর্কে আপনার মনে সুনিশ্চিত ধারণা, প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে, এবং সর্বোপরি, আপনার আত্মবিশ্বাসী থাকার বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পুরো সময়জুড়ে যতটুকু সম্ভব শান্ত ও স্থির থাকতে হবে।
কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে নির্দিষ্ট পদের জন্য প্রয়োজনীয় মূল দক্ষতাগুলো আপনার আছে কী না, তা আগেই খতিয়ে দেখতে হবে। অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে চাকুরিদাতার কাছে নিজের একটি উন্নত ভাবমুর্তি তৈরি করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
যেকোনো চাকরির প্রস্তুতির জন্য দীর্ঘ সময় ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন হয়। চাকরি পেতে ব্যর্থ হলেও এই প্রচেষ্টা বৃথা যায় না। সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে বেশি কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।
অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া
Comments