মৃত ভারতীয় মাকে নো ম্যান্স ল্যান্ডে শেষবিদায় জানালেন ২ বাংলাদেশি মেয়ে
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মুন্সিপুর সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের নাগরিক এক মৃত মাকে শেষবিদায় জানিয়েছেন ২ বাংলাদেশি মেয়ে।
এই মৃত মায়ের নাম ফজিলা খাতুন (৭০)। তিনি ভারতের নদীয়া জেলার চাপড়া থানার হাটখোলা গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল শুক্রবার সকালে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে ফজিলা খাতুন বাংলাদেশে বসবাসরত তার ২ মেয়ের কাছ থেকে শেষবিদায় নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন।
ফজিলা খাতুনের ২ মেয়ে ডালিমুন (৫৫) ও রাবেয়া খাতুন (৫৩) বাংলাদেশের দামুড়হুদা উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন। তাদের দুজনেরই জন্ম ভারতের চাপড়া থানাধীন হাটখোলা গ্রামে।
৩ দশকেরও বেশি সময় আগে ডালিমুনের বিয়ে হয় বাংলাদেশের কুতুবপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। কাছাকাছি সময়ে রাবেয়ার বিয়ে হয় একই গ্রামের মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তারা দুজনেই বাংলাদেশের নাগরিক।
নদীয়ার হাটখোলা আর চুয়াডাঙ্গার কুতুবপুর গ্রামের অবস্থান একেবারে পাশাপাশি। মাঝে শুধু কাঁটাতারের বেড়া।
ডালিমুনের স্বামী হাফিজুর জানান, তারা শুক্রবার সকালেই ফজিলা খাতুনের মৃত্যুর খবর পান। জানতে পারেন তার শেষ ইচ্ছার কথা। ডালিমুন ও রাবেয়াও মাকে শেষবারের মতো দেখতে চান।
এমন পরিস্থিতিতে হাফিজুর বিষয়টি লিখিতভাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নকে (৬ বিজিবি) জানান। বিজিবি তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে। পরে ২ দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতায় মুন্সিপুর সীমান্তের মেইন পিলারের (৯৩) কাছে শূন্য লাইনে মৃত মায়ের সঙ্গে ২ মেয়ের শেষদেখা হয়। এসময় ডালিমুন-রাবেয়ার ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি ২ পরিবারের নিকটাত্মীয়রাও উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ ইশতিয়াকের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'ভারতীয় ভূখণ্ডে মারা যাওয়া মাকে দেখতে বাংলাদেশে বসবাসরত সন্তানরা অনুরোধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি-বিএসএফের সমন্বয়ে মানবতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মৃতের নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে মরদেহ দেখানোর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। মারা যাওয়া ভারতীয় নাগরিক জন্মসূত্রে ভারতীয় এবং স্বামীর সঙ্গে স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস করে আসছিলেন। মৃতের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তারা বিবাহিত এবং স্বামী-সন্তান নিয়ে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।'
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ভবিষ্যতে ২ দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
ফজিলা খাতুনের মেয়ে ডালিমুনের স্বামী হাফিজুর জানান, একসময় তারা খুব সহজেই এপার-ওপার যাতায়াত করতে পারতেন। এখন সীমান্তে কড়াকড়ি বেড়ে যাওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয় না। গত ২ বছর ধরে তিনি ভারতে তার শ্বশুরবাড়িতে যাননি।
তাদের বিয়ের বিষয়ে হাফিজুর বলেন, 'সেমসময় অন্য রকম পরিবেশ ছিল। এপার-ওপারে খুব আত্মীয়তা চলত। এখনো এটা (বিয়ে) হচ্ছে। তবে কম। এপার-ওপার বিয়েটা এখানকার একটা চল (প্রথা)।'
Comments