দেশে দেশে ‘বেগমপাড়া’ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান
বেগমপাড়া ও লুটেরা বিরোধী আন্দোলনের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে কানাডার লুটেরা বিরোধী মঞ্চ। বাংলাদেশ সময় শনিবার সকালে আয়োজিত এ ওয়েবিনারের বিষয় ছিল, 'বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট, অর্থপাচার - দায় এবং করণীয়।'
ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে আশ্রয় নেওয়া লুটেরা ও 'বেগমপাড়ার' বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
ওয়েবিনারে অতিথি আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক, লেখক-গবেষক এম এম আকাশ এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক, লেখক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
আগে 'বেগমপাড়া' বলতে শুধু কানাডাকে ইঙ্গিত করা হতো। কিন্তু এখন প্রমাণিত হয়েছে যে 'বেগমপাড়া' শুধু কানাডাতেই নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকরা অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থে 'বেগমপাড়া' গড়ে তুলেছেন
এম এম আকাশ বলেন, 'বাংলাদেশের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের জন্য চতুর্ভুজ ক্ষমতার কেন্দ্র দায়ী। আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের অসৎ অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। এই চতুর্ভুজই দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের জন্য দায়ী। আর্থিক খাতের বড় বড় দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি সরকার-প্রশাসনের অসৎ অংশের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, এই ব্যবস্থারও পরিবর্তন করতে হবে। এই প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারের ঘাটতি আছে।'
তিনি কানাডায় লুটেরা ও 'বেগমপাড়া' বিরোধী আন্দোলনের প্রশংসা করেন এবং দুর্নীতি বিরোধী ইস্যুতে জনমত গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, 'বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ সংকটের জন্য সরকার যেভাবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও করোনাকে দায়ী করছে, সংকট শুধু সেখানে নয়। সংকটের জন্য আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা বহুলাংশে দায়ী। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে থাকলেও, ভবিষ্যতে তা ভালো হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। তবে সে অবস্থার জন্য রাজনৈতিক শক্তির বোধোদয় ও ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন দরকার।'
তিনি বলেন, প্রবাসীদের বেগমপাড়া বিরোধী সংগ্রামের 'বেগমপাড়া' শব্দটি অর্থনৈতিক গবেষণার একটি শব্দ হিসেবে যুক্ত হয়ে গেছে।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট ড. মঞ্জুরে খোদা। ওয়েবিনার শুরুতে তিনি কি-নোট উপস্থাপন করেন। পরে অংশগ্রহণকারীরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
বক্তারা বলেন, 'আগে বেগমপাড়া বলতে শুধু কানাডাকে ইঙ্গিত করা হতো। কিন্তু এখন প্রমাণিত হয়েছে যে "বেগমপাড়া" শুধু কানাডাতেই নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের লুটেরা ও দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকরা তাদের অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থে বেগমপাড়া গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া নিয়ে দেশ-বিদেশে এ সংক্রান্ত অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ওয়েবিনারে অন্যান্যদের মধ্যে লুটেরাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহমেদ হোসেন, বাকসুর সাবেক ভিপি ফায়েজুল করিম, মাহবুব চৌধুরী রনি, ইঞ্জিনিয়ার নওশের আলি, উদীচী কানাডার সভাপতি সুমন সাঈয়েদ, ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমান, ফারজানা চৌধুরী বিন্দু, রেজা অনিরুদ্ধ, মৈত্রেয়ী দেবী, শৈকত রুশদী ও সুমন জাফর অংশ নেন।
এছাড়া কানাডাপ্রবাসী পেশাজীবী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে নজরুল ইসলাম মিন্টু, আব্দুল হালিম মিয়া, জাকির হোসেন বাচ্চু, মো. আবুল বাসার, রীনা রহমান, হাশমত চৌধুরী, রুবিনা শ্যামা, সুরভি সাঈদ, ওয়াহিদা রহমান, রীনা রহমান, মো. ওবায়দুল হক এতে অংশ নেন।
কানাডায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বেগমপাড়া বিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। দেশে-বিদেশে আলোড়ন তোলা এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হচ্ছে।
Comments