ইউক্রেন যুদ্ধের ১ বছর

নিষেধাজ্ঞার সুযোগে রাশিয়ার বাজার দখল করছে চীনের পণ্য

রাশিয়ায় শাওমির শোরুম। ছবি: শাওমির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
রাশিয়ায় শাওমির শোরুম। ছবি: শাওমির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজ দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ইউক্রেনে নাজিবাদের উত্থান ঠেকানোর কারণ দেখিয়ে কিয়েভ আক্রমণ করে বসে রাশিয়া। এরপর গত ১ বছরে যুদ্ধের ডামাডোলে অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রাশিয়ার বাজার ছেড়ে চলে গেছে। ফলে ভোক্তারা বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।

গতকাল শনিবার এ বিষয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডগুলো এ ক্ষেত্রে অনেকাংশেই এগিয়ে আছে, যেমন স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে শাওমি ও গাড়ি নির্মাতা জিলি। রাশিয়ার শিল্প খাতের সাম্প্রতিক তথ্যে জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি বেড়েছে।

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ নামের গবেষণা সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার বাজারে আইফোন ও স্যামস্যাং গ্যালাক্সি জনপ্রিয় থাকলেও এখন এসব ফোনের জায়গা দখল করেছে শাওমি ও রিয়েলমি।

যুদ্ধের আগেও রুশ স্মার্টফোন বাজারে চীনের ফোনগুলো জনপ্রিয় ছিল। ২০২১ এর ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, স্মার্টফোন বাজারের ৪০ শতাংশ চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে ছিল। ঠিক ১ বছর পর এই হার বেড়ে ৯৫ শতাংশ হয়েছে।

২০২১ এ অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের হাতে যৌথভাবে ৫৩ শতাংশ বাজার থাকলে এখন তা ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ২ প্রতিষ্ঠানই রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।

গাড়ির ক্ষেত্রেও একই ধারা দেখা যাচ্ছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মবিলিটি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিগত গাড়ির শীর্ষ ১০ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে চীনের চেরি ও গ্রেট ওয়াল মোটর।জার্মানির বিএমডব্লিউ ও মার্সেডিজ ইতোমধ্যে বাজার থেকে সরে গেছে।

রুশরা গত বছর রেকর্ড সংখ্যক চীনে নির্মিত গাড়ি কিনেছেন। ২০২২ এ চীনে নির্মিত নতুন গাড়ির বিক্রি ৭ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৮০০ হয়েছে।

রাশিয়ার নিজস্ব ব্র্যান্ড লাদা'র বিক্রিও বেড়েছে। যুদ্ধের আগেও এটি জনপ্রিয় ছিল। ২০২২ সালে তাদের মোট বাজার ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ হয়েছে।

রাশিয়ার নিজস্ব গাড়ির ব্র্যান্ড 'লাদা'। ছবি: এএফপি

বেইজিং ভিত্তিক উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান সাইনো অটো ইনসাইটের প্রতিষ্ঠাতা তু লে বলেন, 'বড় বড় প্রতিষ্ঠান চলে যাওয়ায় বাজারে বড় একটা শূণ্যতা দেখা দেয়। এবং চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো খুশী মনে সেই ঘাটতি পূরণ করছে'।

এই ধারায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে শাওমি। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। বেইজিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি এখন রাশিয়ার শীর্ষ স্মার্টফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। শাওমির রেডমি ফোনগুলো রাশিয়ায় খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে, মূলত এর শক্তিশালী ক্যামেরার জন্য।

বিশ্লেষকদের মতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বাজারের এই ধারা চিরস্থায়ী হবে কি না?

এক বিশ্লেষকের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হওয়ার পর অ্যাপল ও স্যামস্যাং খুব সহজেই তাদের কার্যক্রম শুরু করে হারান বাজার ফিরে পেতে পারে।

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ফিরে এলেও চীনের সংস্থারা তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে পারেন। বিশেষত, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরবরাহ শৃঙ্খল আবারও গড়ে তুলতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে।

কতদিন ধরে যুদ্ধ চলবে, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।

সাইনো অটো ইনসাইটের লে বলেন, 'একটু রুঢ় ভাবে বলতে হয়, প্রকৃত খেলোয়াড়রা মাঠে না থাকায় রুশ ও চীনা ব্র্যান্ডগুলো বাজারে বদলী খেলোয়াড় হিসেবে উপস্থিত রয়েছে'।

'তবে কিছু বদলী খেলোয়াড় তাদের আসন পাকাপোক্ত করে নিতে পারে', যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

11h ago