অনশনরত জাবি শিক্ষার্থী প্রত্যয়ের ওপর হামলার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

৫ দফা দাবিতে ভিসির বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণরুম বিলুপ্তিসহ ৩ দফা দাবিতে অনশনকারী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ কয়েকজনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে জাবির মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ ছিল না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কতিপয় ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী প্রত্যয়ের অনশনস্থলে গিয়ে হামলা করে। সেই সময় প্রত্যয়ের বিছানা-বালিশ তছনছ এবং স্যালাইন রাখার স্ট্যান্ড ভাঙচুর করা হয়। তখন তাদের বাধা দিতে গেলে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচি ও কয়েকজন ছাত্রীকেও তারা মারধর করে। এক পর্যায়ে প্রত্যয়কে জোরপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান জাবি শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস। আর ভাঙচুর চালিয়েছেন গোলাম রাব্বী। তারা ২ জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং জাবি ছাত্রলীগের নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, প্রত্যয়ের সঙ্গে যে শিক্ষার্থীরা ছিলেন, তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক আসেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করে সেটা ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

এই ঘটনার সময়ে প্রক্টরকে ফোন দেওয়া পরেও তিনি আসেননি বলে অভিযোগ ওই শিক্ষার্থীদের। একইসঙ্গে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে বলেও ভুক্তভোগী ছাত্রীরা জানিয়েছেন।

রাত সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থলে যান জাবি প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনা শুনে আমরা এসেছি। এখানে যেসব শিক্ষার্থী হামলা করেছে, তাদেরকে আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। তারা ছাত্রলীগ করে কি না, এটাও জানি না। কারা হামলা করেছে আমরা তদন্ত করে বের করে ব্যবস্থা নেব।'

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে কল আসে মীর মশাররফ হোসেন হলে একজন অসুস্থ, অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে। কে কল দিয়েছিল, সেটা তারা জানেন না।

মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আনিস বলেন, 'একটা ছেলেকে নিয়ে আসা হয়েছে, যার নাম প্রত্যয়। যখন তাকে নিয়ে আসা হয়, তখন সে বার বার বলছিল, "আমাকে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি আসতে চাইনি। ওরা আমাকে মারধর করে জোর করে নিয়ে এসেছে"। পরবর্তীতে তাকে আমরা চিকিৎসা দিতে চাইলে সে নেয়নি।'

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছাত্রলীগ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। যদি কোনোভাবে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

ভিসির বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা

প্রত্যয়ের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে রাত সোয়া ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।

ভিসির বাসার সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবির কথা জানিয়েছেন। তাদের দাবিগুলে হলো—এমএইচ হলে অবস্থানরত সব মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সূর্য ওঠার আগে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সব হল থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে হবে; ছাত্রী নিপীড়ন ও হামলাকারীর প্রত্যেককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং তাদের বিরুদ্ধে উপাচার্যকে বাদী হয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করতে হবে; প্রক্টর ও প্রভোস্টকে অব্যাহতি দিতে হবে; গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতির অবসান করতে হবে এবং প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সিটের ব্যবস্থা করতে হবে।

গত ৩১ মে রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি জাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচের) শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র।

তার দাবিগুলো হলো—বিশ্ববিদ্যালয়ের আবসিক হলে থেকে অছাত্রদের বের করা, হলের মিনি গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা এবং গণরুম বিলুপ্ত করা।

Comments