ঝালকাঠির বাস দুর্ঘটনা ‘চালকের অসতর্কতায়’

যাত্রীবাহী বাসটি পুকুরে পড়ে যায়। পরে উদ্ধারকর্মীরা সেটা তোলে। ছবি: টিটু দাস/স্টার

ঝালকাঠির ছত্রকান্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনাটি চালকের অসাবধানতার কারণে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাসটির যাত্রী, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।

তাদের দাবি, বাস চালানোর সময়ে এর চালক কথা বলতে থাকায় এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের পুকুরে গিয়ে পড়ে। এ ছাড়া, বাসটি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকাত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নিহত ও আহতদের অধিকাংশই পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া ও ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বাসিন্দা।

বাসটির কয়েকজন যাত্রী জানান, বাসটির চালক পুরোটা সময় কথা বলছিলেন। দুর্ঘটনা ঘটার সময়ও তিনি বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এই কারণেই বাসটি বাম দিকে রাস্তা থেকে ছিটকে গিয়ে পুকুরে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুমন বলেন, 'রাস্তা ফাঁকাই ছিল। তারপরেও দেখলাম হঠাৎ-ই বাসটি বাম দিকে কাত হয়ে পুকুরে তলিয়ে গেল।'

যাত্রীরা জানান, 'বাশার স্মৃতি পরিবহন' বাসটি আজ শনিবার সকাল ৯টায় ভান্ডারিয়া থেকে ছেড়ে আসে। ৫২ সিটের বাসটিতে ৬০ জনের বেশি যাত্রী তোলে বাসের সুপারভাইজার ও চালক। ঝালকাঠি গাবখান সেতুর আগের এলাকা থেকেও বাসটি যাত্রী নেয়। এরপর বাসটি চালানো শুরু করলে সকাল ১০টার দিতে ছত্রকান্দা সংলগ্ন এলাকাতেই রাস্তার পাশে একটি পুকুরে পড়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিস বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, 'ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের ৩টি ইউনিট উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে পুকুরের মধ্যে ডুবে যাওয়া বাসটি ২ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করে। বাসের ভেতর থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।'

বাসটির যাত্রী মো. মমিন বলেন, 'ভান্ডারিয়া থেকে সকাল ৯টায় বাসে উঠি। আমি ওঠার আগেই বাসের সব সিট ভর্তি ছিল। পরে তারা আরও যাত্রী তুলেছে। বাসের চালক পুরো সময়ই সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ছত্রকান্দা থেকে যখন যাত্রী নিচ্ছিল তখন ফোনে আমার স্ত্রীকে বলছিলাম, গাবখান সেতুতে থাকতে। কিন্তু, একটু পরেই বিকট শব্দে বাসটি রাস্তার পাশে পানিতে পড়ে যায়। দেখলাম, আমি টাইটানিকের মতো ভাসছি। বাইরে আসার চেষ্টা করেও পারছিলাম না। এক মায়ের কোল থেকে তার শিশুকে নিয়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। বেশ কিছুক্ষণ পর বের হয়ে দেখলাম অনেকেই তখনো বের হতে পারেননি। কয়েকজনকে টেনে বের করতে পেরেছি, কিন্তু আরও অনেকেই আটকে ছিলেন। তাদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে জানি না।'

ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল আসার পথে বাসটি পুকুরে পড়ে ঘটনাস্থলেই ১৭ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের প্রথমে ঝালকাঠি জেনারেল হাসপাতালে এবং তাদের মধ্যে গুরুতর ২ জনকে বরিশাল শের–ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে ৩ শিশু, ৮ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। আর আহতদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী।

বিআরটিএর বক্তব্য

বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক অনিমেষ মণ্ডল বলেন, 'চালকের অসাবধানতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বাসটি চালানোর সময়ও কথা বলছিলেন। তার অসতর্কতার কারণেই এই দুর্ঘটনা।'

তিনি বলেন, 'বাসটি ঢাকা থেকে রেজিস্ট্রেশন ও তৈরি হলেও পরে বরিশালে এনডোর্স করা হয়েছিল। ২০১১ সালে তৈরি বাসটির রুট পারমিট ছিল। চালকের লাইসেন্স ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসের মালিক আবুল কালাম আকনের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়।'

বাসের চালক মোহন দুর্ঘটনার পর পালিয়ে গেছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের মতে, বাসটি পার্শ্ববর্তী পুকুরে পড়েই উল্টে যায়। এর ফলে যাত্রীদের অনেকে বের হতে না পারায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।

তদন্ত কমিটি

এই দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
 

 

Comments

The Daily Star  | English

Rangpur mob violence victims’ families decry police inaction

Four arrested, some culprits have gone into hiding, local police say

1h ago